“আমি ‘প্রথম আলোতে’ ১০ বছর কাজ করেছি সে সময় আমি অনেক পরিবারের সাথে কথা বলেছি ,অনেক ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলেছি ,জিজ্ঞেস করেছি, আচ্ছা বাবা-মা তোমরা বড় হয়ে কি হতে চাও কোনো একজন ও বলেনি যে আমি বড় হয়ে ড্রাইভার হব ,সবাই বলে ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার হব । স্যাভ দ্যা রোডের একটি প্রোগ্রামে ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্ধতন কর্মকর্তা শাহজাহান মিঞাঁর বক্তব্যটিকে তুলে ধরলাম এ জন্য যে আমাদের দেশে বেকার সমস্যার প্রধান এবং অন্যতম কারণ হল পেশার প্রতি সম¥ানহীনতা ,আমরা যদি শুনি কোন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চায়ের দোকান দিয়ে তার পড়ালেখার খরচ মেটাচ্ছে, আমাদের অমাবস্যা তখন ই বাঁকা হতে শুরু করে ।আমরা বিষয়টি শুনার পর অনেকেই বাজে মন্তব্য করি কিংবা সাহায্যের হাত বাড়াতে চাই ,আমি যারা হাত বাড়াতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রশ্ন ছুড়ে দিতে চাই আপনার কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে বাঁচার চেয়ে তার নিজ হাতে উপার্জন কি উত্তম নয়?
আপনি হয়ত কারো বিষয় জেনে এমন একটি পদক্ষেপ নিতে পারেন বা নিয়েছেন কিন্তু যাদের বিষয়ে জানেন না তাদের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিবেন ?যে ছেলেটি তিনবেলা না খেতে পেরে কখনো মামাতো বোনের বাসায় কখনো খালাতো ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নেয় একবেলা খাওয়ার জন্য তার জন্য আপনি কি ব্যবস্থা করবেন ?আর যদি সে ছেলেটি বা মেয়েিেট পরিবারের বড়ই হয় আর তার কাঁধের উপর তার ছোট ভাইবোন এবং –পরিবার বর করে থাকে তখন তাদের জন্য কি পদক্ষেপ নিবেন?আপনি হয়ত পাল্টা প্রশ্ন করবেন তাহলে কেন তারা কাজ করেনা ?ঐ যে আপনি যে কোনো পেশাকে সম্মান করতে জানেন না ,কাজের চেয়ে ভিক্ষাকে বড় মনে করেন ।সে বিশ্ববিদ্যারযে পড়ে অতএব তার জন্য এ কাজ যায়না সে কাজ যায়না এই সেই ..।আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার বন্ধুবান্ধবের ভিতর যে গুলো ঘটছে সেগুলোর আলোকেই বলছি।
এবার যদি আসি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দিকে তাহলে বাকরুদ্ধকর অবস্থায় পড়তে হবে কারণ আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখব প্রতিটি স্টুডেন্টের বায়োডাটা এবং পিতার মাসিক আয়ের সনদ ভর্তির সময় সবকিছু নেন ,কিন্তু কখনো সে অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেছন কি?এ বিষয়টিতে পরে আসছি ,তার আগে যদি শুধুমাত্র এ্যালামনাই ছাড়া বাকি বৃত্তিগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব মাসিক টাকার পরিমাণ ১০০ থেকে সর্বোচ্চ তিনশ টাকার ভিতর ।তাও কখন দেয় ন্যূনতম ৬ মাস পর ,আর এটি পেলে সে আর কোনো বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেনা,আর এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের কথা যদি বলি দু’বছর হয়ে যায় তারপরও শিক্ষার্থীদের প্রথমবারের মত প্রথমবারের টাকা তুলে দিতে পারেনা,অথচ অনার্স লাইফের প্রথম দু বছর ই একটি স্টুডেন্টের কষ্টে কাটে এ সময় তারা না পায় কোনো টিউশন ,না পারে করতে বিকল্প ব্যবস্থা। আর একটি বিষয় যদি লক্ষ্য করি প্রতিটি ডিপার্টৃমেন্টে একজন করে সাবজেক্ট কো-অরডিনেটর থাকেন তারা কতটুকু শিক্ষার্থীবান্ধব ?কতটুকু সময় দেন?অনেকে (শিক্ষার্থীরা) তো তাকে চিনেন ই না,এমন কেউ আছেন কিনা?তাও জানেনা।জানবেও বা কি করে?
এ কথা গুলোবলার একমাত্র কারণ “পূর্ণিমার চাঁদ যেন জলসানো রুটি” পেটে ক্ষুধা থাকলে পড়াশুনা হবে কিভাবে?আবার প্রতিযোগিতার বাজারে যোগ্যতা না থাকলে চাকুরীও বা হবে কিভাবে?
মা-বাবা এবং স্থানীয় অভিবাবকের গাফলতিও একজন শিক্ষার্থীর অযোগ্য হওয়ার পিছনে দায়ী,কারণ তারা নিয়মিত সঠিক খোঁজ খবর নেন না ,তারা কোথায় সময় কাটায় ?কি করে? পড়াশুনা কতটুকু করে?এগুলো সঠিকভাবে প্রতিনিয়ত নজরদারীর অভাব এবং সন্তানের সিদ্ধানÍ সন্তানকে নিতে দেওয়ার ফলে ফলাফলের খাতাকে শূন্যই দেখা যায়।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং অস্থিতিশীলতা এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী।শিক্ষার্থীদের হলে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকাও মেধাহীনতার সৃষ্টি করছে,যার উজ্জ্বল উদাহরণ শ্রেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের একটিও না থাকা।উদ্যোগতার অভাব,কর্মসংস্থানের অভাব,কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব,ঢাকামুখীতা-শিল্পের –বিকেন্দ্রীকরণ করতে না পারা,প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপের অভাব ,ঘুষ,স্বজনপ্রীতি,দুর্নীতি ইত্যাদি কারণে প্রতিদিন বেকার সমস্যা বেড়েই চলেছে ।আজ বাংলাদেশের কর্মঠ জনসংখ্যা থেকে যদি ৩০ লাখ ই বেকার বসে থাকে তবে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ করার ভাবনা শুধু অলীক কল্পনা বলেই মনে হবে। যখন তরুনেরা আর হতাশায় ভুগবেনা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশ-ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টে পড়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যার বলি হওয়া সেটি সত্যিই লজ্জ্বাজনক ,আর দেশের সত্যিকার ভবিষ্যৎ প্রতিনিধিদের অবস্থা যদি এমন হয়,তবে অন্যদের বিষয়ে আর কি বলার থাকে …
নাম:মো: হাসান মাহমুদ ইলিয়াস, শিক্ষার্থী,দর্শন বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল: [email protected]