গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের স্থগিতাদেশের বাধা বৃহষ্পতিবার সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে বাধা দূর হয়ে যাবার পর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আবারও নির্বাচনী মাঠে নামতে শুরু করেছেন। নির্বাচনের তারিখ নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষনা করা না হলেও প্রার্থীরা বসে নেই তাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা থেকে। বিভিন্ন কৌশলে গণসংযোগ করছেন এবং নিজেদেরকে ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন ভোট পাবার আশায়। শুক্রবার প্রার্থীগণ ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। জুম্মাবার হওয়ায় এদিন প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করেছেন। এসময় তারা মুসুল্লীদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেছেন এবং ভোট ও দোয়া চেয়েছেন। অনেক প্রার্থী ভোটারদের বাড়ি, শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণে ভীড় জমিয়েছেন এবং নানা আশার বাণী শুনিয়ে সমর্থণ আদায়ের চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাত করে এদিনটি ব্যস্ত কাটিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন গত ৬ মে আদালতে স্থগিতাদেশ ঘোষণার প্রেক্ষিতে নগরীর সর্বত্র নিস্তব্ধতা চলে আসে। প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকসহ স্থানীয়রা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। চারদিন নিস্তব্ধতার পর বৃহষ্পতিবার (১০ মে) উচ্চ আদালতে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ২৮ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠাণ করার আদেশ দেয়া হয়। আদালতের এ আদেশ জানতে পেরে নির্বাচনে সকল প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে। ভোটারদের মাঝেও উৎফুল্লতা দেখা দেয়। চারদিনের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে উজ্জীবিত হয়ে উঠে গাজীপুর সিটি’র নির্বাচনী পরিবেশ। সরব হয়ে উঠে পুরো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা ও ভোটাররা। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীগণসহ তাদের কর্মী-সমর্থক ও নগরবাসীর মধ্যে উদ্দীপনা ফিরে আসে। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর রবিবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নতুন নির্বাচনী তারিখ ঘোষনা করবেন নির্বাচন কমিশন।
শুক্রবার আওয়ামীলীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম শুক্রবার তার নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন অপর প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বাড়ির পাশে টঙ্গী সরকারী কলেজ মসজিদে জুমা নামাজ আাদায় করতে। অপর দিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বরাবরের মত জুম্মা নামাজ আদায় করেন টঙ্গীর বড় দেওড়ার মৃত্তিবাড়ি রোডে তাঁর প্রতিষ্ঠিত আহসানউল্লাহ সরকার মাদ্রাসা কমপ্লেক্স মসজিদে। উভয় প্রার্থীই মুসুল্লীদের কাছে দোয়া কামনা করেন।
এদিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের ছয়দানা এলাকার বাসভবনে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীরা শুক্রবার সকাল থেকে এসে ভীড় জমাতে শুরু করেন। এসময় মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নেতাকর্মীদের সঙ্গে আদালতের নির্দেশনানুযায়ী ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের জন্য খোলামেলা মতবিনিময় করেন। তিনি নতুন উদ্যোমে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার বিজয়কে সুনিশ্চিত করতে নেতাকর্মীদের আবেদন জানান। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যাতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আর কেউ বাধাগ্রস্থ করতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানান নেতাকর্মীদের প্রতি। তিনি উচ্চ আদালতের ১০ মে’র রায়কে স্বাগত জানিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকলের সুবিধাজনক সময়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সু-সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে শুক্রবার সকালে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব হাসান উদ্দিন সরকারের টঙ্গীর বাসভবনে আগত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে উচ্চ আদালতের নির্দেশনামতে ঘোষিত তারিখ ২৮ আগস্টের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যপারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় তিনি আদালতে আইনী লড়াইয়ের প্রথম ধাপে তিনি বিজয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোটের লড়াইয়েও বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীর জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাতে সবাই ভোট দিতে পারে সে বিবেচনায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষনার দাবী জানান নির্বাচন কমিশনের কাছে।
শ্রমিকদের স্বার্থে ২৬ কিংবা ২৭ জুন ভোট চান হাসান উদ্দিন সরকার
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার আগামী ২৬ অথবা ২৭ তারিখ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণের দাবী জানিয়েছেন। তিনি শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাতকার দেয়ার সময় এ দাবী জানান।
এসময় তিনি বলেন, গাজীপুর শিল্প সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে বহু শ্রমিক এবং ভাসমান ভোটারের বসবাস। ঈদের ছুটিতে এসব ভোটার গ্রামের বাড়িতে যান এবং তাদের ফিরতে কয়েকদিন লেগে যায়। বিপুল সংখ্যক এসব ভোটার যেন নির্বাচনী উৎসবে অংশ নিতে পারেন সেজন্য ২৬ কিংবা ২৭ জুন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠাণ হলে ভাল হয়।
এরআগে তিনি জুম্মার নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। এসময় তার সঙ্গে গাজীপুর মহানগর লেবার পার্টির সভাপতি আহসান হাবীব ইমরোজ, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল-মামুন, টঙ্গী সচেতন নাগরিক পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ১৫ মে খুলনার সঙ্গে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠাণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা জেলার সাভার থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৬ টি মৌজা গাজীপুর সিটিতে অন্তর্ভূক্ত করে নির্বাচনী তফশীল ঘোষনা করলে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ গাজীপুর সিটি থেকে ৬ মৌজা বাদ দিতে হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১৩ সালেও বর্তমান সীমানাতেই ভোট হয়েছিল। সুরুজের দাবী, তার ইউনিয়নের ৬ টি মৌজা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে পড়েছে। এতে ওই মৌজা গুলোর ভোটাররা দুই এলাকার ভোটার হয়ে গেছে। শুনানী শেষে আদালত গত ৬ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়। পরে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে গত ৭ মে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে প্রথম আপিল করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। পরদিন ৮ মে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবং পরে নির্বাচন কমিশনও আপিল করে। আপীলের শুনানী শেষে উচ্চ আদালত ১০ মে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল করে ২৮ জুনের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠান করার নির্দেশ দেন। এ আদেশের প্রেক্ষিতে আাগামী রবিবার নির্বাচন কমিশন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নতুন নির্বাচনী তারিখ ঘোষনা করবেন।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, গত ৩১ মার্চ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ মে এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন। এদের মধ্যে ৬জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডেও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি আরো জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫লাখ ৬৭হাজার ৮০১।