বজ্রপাতে প্রাণহানি কমছে না। বুধবার বজ্রপাতে নয় জেলায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।আহত হয়েছে আরও ১৪ জন।এর মধ্যে হবিগঞ্জে ছয়জন,রাজশাহীতে তিনজন কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ও নীলফামারীতে দুইজন এবং গাইবান্ধা, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও মানিকগঞ্জে একজন করে মারা গেছে।বুধবার ঝড়-বৃষ্টি সময় এ বজ্রপাতে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।সরকারি হিসেবে মার্চ-এপ্রিল দুই মাসে বজ্রপাতে ৭০ জন নিহত হয়েছে; ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে প্রতিদিনই হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

হবিগঞ্জ:হবিগঞ্জে হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চারজন।এরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার বৈলাকপুর গ্রামের হরিচরণ পালের ছেলে নারায়ণ পাল ও আমড়াখাই গ্রামের হাবিব উল্লার ছেলে আবু তালিব, মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম গ্রামের রামচরণ সরকারের ছেলে জহরলাল সরকার, লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের জাহেদ মিয়ার ছেলে চকি মিয়া, সুনামগঞ্জের ধাইপুর গ্রামের বসন্ত দাসের ছেলে স্বপন দাস ও সিরাজগঞ্জের নওসের মিয়ার ছেলে জয়নাল মিয়া।স্থানীয়দের বরাত দিয়ে প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ জানান, বেলা ১১টায় বানিয়াচংয়ের মাকালকান্দি হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপালে ঘটনাস্থলেই স্বপন দাস মারা যান। প্রায় একই সময়ে মাইচ্ছার বিল হাওরে বজ্রপাতে মারা যান জয়নাল মিয়া।এসময় আহত হন আরও চার ধানকাটা শ্রমিক।তাদের বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।তাছাড়া লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন চকি মিয়া। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণ করেন।এছাড়া দুপুরে নবীগঞ্জের বৈলাকপুর হাওরে বজ্রপাতে নারায়ণ পাল ও আবু তালিব নিহত হর। একই সময়ে মাধবপুরের পিয়াইম হাওরে নিহত হন জহরলাল সরকার।

জামালপুর:জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।বুধবার উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের মৌলভীর চরে এ ঘটনা ঘটে বলে ওই ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়নাল আবেদীন নাদু জানান।নিহত মো. হাবিবুর রহমান (৪৭) মৌলভীর চরের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে।জয়নাল আবেদীন বলেন, হাবিবুর কৃষিশ্রমিকদের সঙ্গে বাড়ির কাছেই ধান কাটতে যান। হঠাৎ বজ্রবৃষ্টি শুরু হলে তিনি ধানকাটা বাদ দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন। পথে বজ্রপাত হলে তিনি সংজ্ঞা হারান।স্থানীয়রা তাকে প্রথমে সানন্দবাড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং পরে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কিশোরগঞ্জ:কিশোরগঞ্জের নিকলী ও পাকুন্দিয়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুইজন নিহত হয়েছে।এরা হলেন নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের পরিষদপাড়া গ্রামের শাহ জালাল (২৪) ও পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আশুতিয়া গ্রামে দিপালী রানী বর্মণ (৩৫)শাহ জালাল হাওরের জমি থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দিয়ে ধান আনার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় বলে ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন জানান।আর বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন দিপালী।আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হামিদ জানান।

ময়মনসিংহ:ময়মনসিংহের সদর উপজেলায় বজ্রপাতে একজন নিহত হয়েছে। এ সময় মুক্তাগাছায় আটজন আহত হয়েছে।বুধবার দুপুরে উপজেলার চর নীলক্ষীয়ায় বজ্রপাতে মারা যান আলাল উদ্দিন (৬০)।ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম বলেন, বাড়ি থেকে বের হয়ে আলাল উদ্দিন গরু আনতে যাচ্ছিলেন। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।মুক্তাগাছা থানার ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লা জানান, উপজেলার নতুন বাজার গরুর হাটে বজ্রপাতে আটন আহত হয়। আহতদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ:সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও শাল্লায় বজ্রপাতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।এরা হলেন ধরমপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্বাকান্দা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে জুয়েল আহমদ (১৬) ও শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে আলমগীর মিয়া (২২)।ধরমাপাশা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নূর ইসলাম জানান, দুপুরে জুয়েল মিয়া বাড়ির পাশে কাইলানী হাওরে ধান কাটতে যায়। ধান কাটার সময়ই বজ্রপাতে আহত হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ধরমপাশা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।শাল্লা থানার ওসি দোলোয়ার হোসেন জানান, আলমগীর মিয়া ট্রলি চালিয়ে ছায়ার হাওরে যাচ্ছিলেন কাটা ধান বাড়িতে আনতে। পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

মানিকগঞ্জ:মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।বুধবার সকালে উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের বাচামারা গ্রামে বজ্রপাতের ঘটনায় মারা যান গ্রামেরইয়াকুব আলী (৫০)।দৌলতপুর থানার ওসি সুনীল কুমার কর্মকার জানান, সকালে ইয়াকুব আলী বাড়ির কাছে ধানক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মধ্যে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

নীলফামারী:বজ্রপাতে নীলফামারীর জলঢাকায় দুইজন নিহত হয়েছে।বুধবার সকালে জেলা জুড়ে ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টির সময় বজ্রপাত তাদের মৃত্যু হয়।এরা হলেন উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের শালনগ্রামের আসমা বেগম (৫০) ও কাঁঠালী ইউনিয়নের উত্তর দেশীবাই গ্রামের নূর আমিন (৪৫)।বালাগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিপন বলেন, ঝড় ও শিলা বৃষ্টির সময় আসমা বেগম তার বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলে। এসময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।কাঁঠালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন তুহিন বলেন, আর নূর আমিন বাড়ির উঠানে থাকা ধান বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে ঢাকতে যান। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।এদিকে একই সময়ে ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরশ্বর গ্রামে বজ্রপাতে পাঁচটি গাভির মৃত্যু হয়েছে।গ্রামের রাস্তার পাশে একটি টিনের চালার মধ্যে গাভিগুলো বাঁধা ছিল। বজ্রপাতে সেখানেই মারা পড়ে এগুলো।

রাজশাহী:রাজশাহীর তানোরে বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও দুইজন।বুধবার সকালে উপজেলার দুবাইল, চক্রতিরা ও বাতাসপুর গ্রামে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।নিহতরা হলেন বাতাসপুর গ্রামের কৃষক আনসার আলী (৩০), দুবইল পূর্বপাড়ার কিশোর সোহাগ আলী (১৬) ও কলমা ইউনিয়নের চক্রতিরাম গ্রামের বেলাম হেমব্রমের স্ত্রী এলেনা মুরমু (৩৫)উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক জানান, সকালে বৃষ্টির সময় সময় মাঠে ধান কাটছিলেন আনসার আলী। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আহত হন একই গ্রামের আনন্দ সাহা ও লিটল সাহা।

আর ধানকাটার সময় বজ্রপাতে এলেনা ও মাঠে গভীর নলকূপে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান সোহাগ আলী।তানোর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শওকাত আলী বলেন, উপজেলার দুই ইউনিয়নের বজ্রপাতে দুইজন মারা যাওয়ার খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী (ভূমি) কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পাঠানো হয়েছে।নিহত প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল অনুদান দেওয়া হয়েছে।

গাইবান্ধা:গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের পশ্চিম ছালুয়া গ্রামের চরে বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।নিহত মহর আলী (৩৫) উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের চর কাবিলপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে।উদাখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, বুধবার ১২ জন কৃষি শ্রমিক ওই চরে আব্দুর রউফ মিয়ার জমির বোরো ধান কাটতে যায়। সাড়ে ৯টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে কাজ ফেলে কাছের এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়।কিন্তু মহর আলী দৌড়াতে গিয়ে উল্টে পড়ে যায় এবং সে সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।