গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ে (বশেমুরকৃবি) উপাচার্য ও ট্রেজারের অফিস কক্ষ ও গাড়িসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর এবং দুই শিক্ষক ও কর্মচারীকে লাঞ্চিত করার ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে মানব বন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে। ঘটনার তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করেছে। এদিকে ওই ঘটনায় বুধবার ৮৫জন শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম ফজলে রাব্বি বাধনসহ মামলায় অভিযুক্ত ৮জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বশেমুরকৃবি’র প্রক্টর ড. মোঃ আরিফুর রহমান খান ও শিক্ষক সমিতির আহবায়ক প্রফেসর ড. জালাল উদ্দিন আহমেদ জানান, তিন সেমিস্টার একাডেমিক পদ্ধতি বাতিল করে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুসহ তের দফা দাবিতে বহিরাগতদের সহযোগিতায় গাজীপুরস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের (বশেমুরকৃবি) কিছু শিক্ষার্থী মঙ্গলবার রাতে ক্যাম্পাসে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ইটপাটকেল ছুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারের অফিস কক্ষ ও গাড়িসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইব্রাহীম রশীদ ও উর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে লাঞ্চিত করে। এসময় এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে। মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনায় বুধবার ৮৫জন শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ১৫জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৬০/৭০জনকে আসামী করা হয়েছে। আসামীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম ফললে রাব্বি বাধন, সহ-সভাপতি নওয়াজীশ খান তারিক, সাধারন সম্পাদক মীর ওবায়দুর রহমান শাওন ও যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান আনসারীও রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ জানান, মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা-ভাংচুর ও লাঞ্চিতের ঘটনা তদন্তের জন্য বুধবার ৫সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ অনুষদের সাবেক ডীন প্রফেসর ড. সাইফুদ্দিন আহমেদকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতের এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ভাংচুর এবং দুই শিক্ষক ও কর্মচারীকে লাঞ্চিত করার ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আহবায়ক গ্রাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. জালাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা সকালে ক্যাম্পাসে মানব বন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা, ভাংচুর ও লাঞ্চিতের ঘটনায় উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানান এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের দাবী জানান।

জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা-ভাংচুর ও লাঞ্চিতের ঘটনায় বুধবার ৮৫জন বহিরাগত ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্বে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী আইয়ূব আলী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম ফজলে রাব্বি বাধনসহ ১৫জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৬০/৭০জনকে আসামী করা হয়েছে। আসামীদের অধিকাংশই বহিরাগত। মামলার অভিযুক্ত এসএম ফজলে রাব্বি বাধন ও নওজিশ খান তারিকসহ ৮জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বশেমুরকৃবি’র প্রক্টর আরো জানান, গ্রেফতারকৃত এসএম ফজলে রাব্বি বাধন বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়। সে কয়েক বছর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্স শ্রেণী হতে উত্তীর্ণ হয়। এছাড়া আন্দোলনরতদের দাবীগুলো অযৌক্তিক। আন্দোলনরতদের ১৩ দফা দাবীর মধ্যে সেমিস্টার সিস্টেমটা পরিবর্তন করাটা এ মুহুর্তে সম্ভব না হলেও অন্য দাবীসমূহের অধিকাংশই পর্যায়ক্রমে সমাধানের পথে। এখানে কোন আবাসন সংকট নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৪০০ শিক্ষার্থীর সবারই আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।