অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।আদালতের আদেশে স্থগিত হয়ে যাওয়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন।সকাল ১০টা থেকে দুদকের উপ-পরিচালক আখতার হামিদ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বলে দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।তিনি বলেন, তাবিথকে তলব করে গত ২৪ এপ্রিল অনুসন্ধান কর্মকর্তা আখতার হামিদ নোটিস পাঠান।
সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই দুর্নীতির অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ী তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, আমাকে তলব করা হয়েছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে, হয়রানির উদ্দেশ্যে। এটা শুধু আমাকেই নয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য নেতাদেরও করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মঙ্গলবার (০৮ মে) দুপুরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তাবিথ আউয়াল।
তিনি বলেন, আমি মনে করি দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে রাষ্ট্র বা সরকারের সকল পদক্ষেপে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে হয়রানি করা। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি হচ্ছে। তাকে কেন্দ্র করে আমাদের সবাইকেও হয়রানি করা হচ্ছে। কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ বলেন, দুদক আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ করেছে, তা আপনারা তাদের কাছ থেকেই শুনে নেবেন। তবে দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার সুষ্ঠুভাবেই কথাবার্তা হয়েছে। তার আলোকে আমি মনে করি একটা সুষ্ঠু অনুসন্ধান দেখতে পারবো।
এই অভিযোগ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে কোনো প্রভাব ফেলবে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন বর্তমানে নির্বাচনটি স্থগিত রয়েছে, আশা করি নির্বাচনটি হবে এবং তাতে আমি জয়ী হতে পারবো। আর আইন অনুযায়ী এখনও আমি প্রার্থী রয়েছি। তবে অনুসন্ধন শেষ না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না, এটা দলীয় না অন্য কোনো উদ্দেশ্য। এটা নিয়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে চাইছি না।একটি অনুসন্ধান চলছে এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাইছি না। তাছাড়া আইনি বাধাও রয়েছে। এজন্য এ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না, বলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল।দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দেশের বাইরে অর্থপাচারের একটি অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাবিথকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে বিএনপির শীর্ষ আট নেতার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ১২৫ কোটি টাকা লেনদেন করার আরেকটি অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলম।গত ২ এপ্রিল বিএনপির শীর্ষ আট নেতাসহ ১০ জনের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদকওই ১০ জন হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম মোর্শেদ খান, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল, এম মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিএনপির সহ-সভাপতি ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ প্রার্থী হয়েছেন।দুই সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য ২৬ ফেব্র“য়ারি ভোটের দিন ঠিক করে তফসিল দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী বিএনপি ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে তাদের প্রার্থী হিসেবে তাবিথ আউয়াল এবং আওয়ামী লীগ আতিকুল ইসলামের নাম ঘোষণা করে।কিন্তু বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই ইউপি চেয়ারম্যানের করা রিট আবেদনে হাই কোর্ট ওই নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়।