রাজধানীর চামেলীবাগে সাড়ে চার বছর আগে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে সহযোগিতার অভিযোগ থেকে গৃহপরিচারিকা খাদিজা আক্তার সুমিকে খালাস দিয়েছে আদালত।ঢাকার মহানগর শিশু আদালতের বিচারক মহানগর দায়রা জজ আল মামুন রোববার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
ওই হত্যাকান্ড যখন ঘটে সুমির বয়স ছিল তখন ১১ বছর। বর্তমানে ১৬ বছরের এই তরুণী খালাসের রায় পেয়ে খুবই আনন্দিত।রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সুমি বলে, আমি তো সহযোগিতা করি নাই। আমি তো দোষী না সেটা বলছিলাম। আরও আগে এই রায় দেওয়া উচিৎ ছিল।এ মামলায় নিম্ন আদালত ঐশী রহমানকে মৃত্যুদন্ড দিলেও হাই কোর্ট গতবছর তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। আর গৃহকর্মী সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় মামলার তার অংশের বিচার চলে শিশু আদালতে।২০১৩ সালের ১৬ অগাস্ট মালিবাগের চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর ও তার স্ত্রী স্বপ্নার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মা-বাবা খুন হওয়ার পর পালিয়ে যায় স্কুলছাত্রী ঐশী।পরদিন মাহফুজুরের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন ঐশী।ওই ঘটনায় বর্তমান সময়ের শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠা এবং তাতে অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন ওঠে, তেমনি ঐশীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বহীন আচরণেরও সমালোচনা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবুল খায়ের মাতুব্বর ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দুটি অভিযোগপত্র দেন। সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় শিশু আইনে একটি এবং ঐশীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক সাঈদ আহমেদ ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর এ মামলার রায়ে ঐশীকে মৃত্যুদন্ড দেন। আর বাবা-মাকে খুনের পর যে বন্ধুর বাসায় ঐশী আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই মিজানুর রহমান রনিকে দেওয়া হয় দুই বছরের কারাদন্ড।বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৫ জুন ঐশীর সাজা কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় হাই কোর্ট। রনিকে বিচারিক আদালতের দেওয়া দুই বছরের ওই সাজার রায় হাই কোর্টেও বহাল রাখা হয়।রায়ে হাই কোর্ট বলেছে, মাদকাসক্তি থেকে মানসিক বিচ্যুতির’ কারণে ঐশী তার বাবা-মাকে খুন করেছে। ওই ঘটনা ঘটানোর পেছনে তার স্পষ্ট কোনো উদ্দেশ্য ছিল বলে আদালতের মনে হয়নি।এদিকে শিশু আদালতে ২০১৪ সালের ২০ মে অভিযোগ গঠন করে সুমির বিচার শুরু করেন বিচারক। ওই বছর ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় এই কিশোরীকে।মামলার ৪৯ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মোট ২৩ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ২২ এপ্রিল শিশু আদালতের বিচারক রায়ের দিন ঠিক করে দেন।
আইন ও শালিস কেন্দ্রের একজন মাঠকর্মীর সঙ্গে রোববার রায় শুনতে আদালতে আসে সুমি। এ মামলায় আইন ও শালিস কেন্দ্রের আইনজীবী মিজানুর রহমান তাকে আইনি সহায়তা দেন।সুমিকে খালাস দিয়ে রায়ে বলা হয়, সুমি হত্যাকান্ডে সহযোগিতা করেছিল- এ অভিযোগ সন্দোহীতভাবে প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে।আইন ও শালিস কেন্দ্রের মাঠকর্মী শামসুন্নাহার জানান, সুমি মিরপুরে তাদের নির্মল পুনর্বাসন কেন্দ্র থাকে। ভবিষ্যতে তার লেখাপড়া ও জীবন গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু আইন ও শালিস কেন্দ্র থেকে করা হবে।২০১৪ সালে সুমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। মামলার কার্যক্রমের কারণে সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি। তবে এখন আবার তার পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হবে।