রোহিঙ্গা ইস্যুটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ তাদের করণীয়র অগ্রাধিকার তালিকায় রাখছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যর্পণ বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তা যেন সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, সে নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ কাজ করবে।সোমবার বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যাওয়ার আগে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদল এ কথা বলে। সেখানে ছিলেন নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলটির প্রধান এবং জাতিসংঘে পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি গুস্তাভো মেজা কোয়াদ্রা। আরও ছিলেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি কারেন পিয়ার্স। ছিলেন কুয়েতের মনসুর আল ওতাইবিও।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক বড় মানবিক কাজ করেছে। তাঁরা মনে করেন, রাশিয়া ও চীন এই সমস্যা সমাধানের পথে বাধা দিচ্ছে না।প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সংবাদ ব্রিফিংয়ের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তারপর বিমানবন্দরে চলে আসেন। পরে তাঁরা মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা হন।গত শনিবার প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় আসে। তিন দিনের সফরে দলটির সদস্যরা কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির কোনারপাড়ায় শূন্যরেখায় যান। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। পাঁচ স্থায়ী সদস্য একমত হতে না পারায় এখনই নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না। তবে এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সে জন্য জোরালো চেষ্টা থাকবে নিরাপত্তা পরিষদের।রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে একটি মানবিক সঙ্কট এবং মানবাধিকারের সঙ্কট হিসেবে বর্ণনা করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দল বলেছে, সমাধান না করে এই সমস্যা এভাবে ফেলে রাখা যায় না।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখে সোমবার বাংলাদেশ ছাড়ার আগে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের পক্ষে কুয়েতের স্থায়ী প্রতিনিধি মনসুর আয়াদ আল-ওতাইবি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, যে বার্তা আমরা মিয়ানমার, রোহিঙ্গা শরণার্থী আর পুরো বিশ্বকে দিতে চাই, তা হল এই সঙ্কটের অবসান ঘটাতে এবং সমাধানের একটি পথ খুঁজে বের করতে আমরা বদ্ধপরিকর।এই প্রতিনিধি দলের নেতা নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের সভাপতি গুস্তাবো আদোলফো মেসা কুয়াদ্রা ভেলাসকাসও ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর পর্ষদ হিসেবে বিবেচিত নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ দেশের প্রতিনিধিসহ ৪০ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন। সোমবার তারা রওনা হন মিয়ানমারের নেপিদোর উদ্দেশ্যে।গতবছর অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয়ার পর এই প্রথম জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কোনো প্রতিনিধি দলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করল। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ব্যাপক হত্যা নির্যাতনের মুখে গত আট মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করে আসছে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে এলেও এই সঙ্কটে জাতিসংঘের এই পর্ষদ কীভাবে সম্পৃক্ত হবে তা নিয়ে মিয়ানমারের দুই মিত্র দেশ রাশিয়া ও চীনের ভিন্নমত ছিল।অন্যদিকে লাখ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহ করে আসা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই সঙ্কটের দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদকে।এই সঙ্কট সময়মত সামাল দেওয়া না হলে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করে আসছে বাংলাদেশ।কুয়েতের প্রতিনিধি মনসুর আয়াদ আল-ওতাইবি এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেন, চীন বা রাশিয়ার দিক থেকে কোনো বাধা তিনি দেখেননি। তারা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য এবং তারাও আমাদের সাথে আছে। তাদের বক্তব্য গতকাল আপানারা শুনেছেন। আজ তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন এবং এই সঙ্কটের সমাধানে পৌঁছানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।অবশ্য তারা যে এ সমস্যার সহজ বা তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান দেখতে পাচ্ছেন না, সে কথাও বলেন মনসুর আয়াদ আল-ওতাইবি। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধানে সব পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে।