বিশ্ব দরবারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরে সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। একইসঙ্গে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের গঠনমূলক আলোচনা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়েছেন তারা। বান্দরবান ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন শেষে একথা জানান তারা। এদিকে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, মিয়ানমারের কারণেই রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহল সেটি অনুধাবন করেছে। রোববার সকালে, বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পরিদর্শনে যান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের ২৬ সদস্য। সেখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। এ সময় প্রতিনিধি দলকে নির্যাতনের বর্ণনা দেন রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রতিনিধি দলের কয়েক সদস্য। আশ্বাস দেন সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখার। প্রতিনিধিদের একজন বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। পাশাপাশি তাদের সার্বিক অবস্থা জেনেছি।’ আরো একজন বলেন, ‘আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সফর শেষে তাদের কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবো।’
এরপর, কক্সবাজারের উখিয়ার থাইংখালি ও কুতুপালং আশ্রয় শিবির পরিদর্শনে যায় প্রতিনিধি দলটি। কুতুপালংয়ে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের ২৬ জন প্রতিনিধি ৪ দলে বিভক্ত হয়ে আশ্রয় শিবির ঘুরে দেখেন। এসময় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
রোহিঙ্গাদের মুখে নির্যাতনের কথা শুনলেন জাতিসংঘের সদস্যরা
মিয়ানমার সেনাদের নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শনে আসা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার শুন্য রেখায় সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখেছেন।
প্রতিনিধি দল উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে কথা বলেন নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে। উচ্চ পর্যায়ের এ প্রতিনিধি দলকে কাছে পেয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা তাদের উপর মিয়ানমারে চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তাদের অবস্থান থেকে এ ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দেন রোহিঙ্গাদের।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত দক্ষিণ আমেরিকান দেশ পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো মেজা-চুয়াদ্রার নেতৃত্বে রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ির তুমব্রুর কোনারপাড়া জিরো পয়েন্ট যান। নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিন দেখে তারা উখিয়ার বালুখালী-০২ ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এরআগে শনিবার বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটের সময় কুয়েত থেকে বিমান যোগে সরাসরি কক্সবাজার বিমান বন্দরে পৌঁছেন ৩০ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে এ প্রতিনিধি দল ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপে চলে যান বিকেল ৫টার দিকে। ওই হোটেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবসন কমিশনারের সাথে মতবিনিময় করেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলের কক্সবাজার আগমনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে জেলা পুলিশ।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ জনসহ ৪০ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় কুয়েত থেকে সরাসরি কক্সবাজার পৌঁছান। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন পেরুর গুস্তাভো মেজা-চুয়াদ্রা, যিনি চলতি (এপ্রিল) মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিনিধি দলে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও চীনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বলিভিয়া, ইকুয়েটোরায়েল গায়েনা, ইথিওপিয়া, কাজাখস্তান, কুয়েত, নেদারল্যান্ডস, পেরু, পোল্যান্ড ও সুইডেনের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং আইভরি কোস্টের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি রয়েছেন।
রোববার বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকার উদ্দেশ্যে বিমান যোগে কক্সবাজার ত্যাগ করবেন প্রতিনিধি দল। সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এরপর সকাল সাড়ে ১০ টায় মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করবেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের এ প্রতিনিধি দল। রোহিঙ্গা সংকটের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলটি প্রথমবারে মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছেন।
গত বছরের ২৫ আগষ্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা উখিয়া টেকনাফের ৩০ টি ক্যাম্পে বসবাস করছে।