রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল।শনিবার সিডনিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানিয়েছেন। বিকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে টার্নবুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা।বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, এই দুই নেতার মধ্যে দেড় ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি উঠলে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি তার দেশের সমর্থনের কথা জানান অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী।ইহসানুল করিম বলেন, অস্ট্রেলিয়া যেন তাদের নাগরিকদের ফেরত নেয় সেজন্য তাদের চাপ অব্যাহত থাকবে বলে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মুখে গত বছরের ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।রাখাইনে সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের নাগরিক এই রোহিঙ্গারা তাদের আবাসভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছে।
মিয়ানমার তাদের এই নাগরিকদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে। প্রথম দফায় প্রত্যাবাসনের জন্য আট হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল মিয়ানমারকে।ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে ৩৭৪ জনকে রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছিল, যে কোনো সময় তাদের ফিরিয়ে নিতে তারা প্রস্তুত। তবে এখনও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তাদের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান নির্মাণের বিষয়েও টার্নবুলকে জানান শেখ হাসিনা।এর আগে শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতেও রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পর্যায় থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।টার্নবুলের সঙ্গে বৈঠকে ওসানোগ্রাফিতেও (সমুদ্র সম্পদ নিয়ে গবেষণা) অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়েও দুই প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করেছেন বলে জানান ইহসানুল করিম।বাণিজ্য ও বিনিযোগ বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন তারা।টার্নবুলকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী।বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীও ছিলেন।