ডায়রি লেখার অভ্যাস সেই স্কুল জীবন থেকেই ছিল,কিন্তু কখনওই ভাবিনি আমার জীবন এভাবে গল্প হয়ে উঠবে। আমি আমার বাবা মার দ্বিতীয় পুত্র সন্তান তাই জন্মের ৪ বছর পরও আমি বুঝতে পারিনি যে আমি একটা ছেলে। আমার মা আমাকে টিপিকাল মেয়ে সাজিয়ে রাখতো লিপস্টিক কাজল পরিয়ে। আমার বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার, আমার জন্ম হয়েছিলো রাজশাহী। তখন মায়ের বয়স টাও অনেক কম তাই অ্যাডভেনচার মুড ছিলো একেবারে তুঙ্গে । বাবার সঙ্গে সঙ্গে মাও আমাদের সেখানে নিয়ে ছুটতো যেখানে বাবার পোস্টিং হতো।

আমার বয়স তখন ওই ৫ এ দাঁড়িয়েছে যখন আমাদের সামনের কোয়ার্টারে হক আঙ্কেল রা আসে।হক আঙ্কেলের আগে পোস্টিং ছিলো বগুরা। পাশাপাশি থাকার কারনে দুই পরিবারের ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।সেইসুবাদে তখন আমার একটা নতুন বন্ধু হলো হক আঙ্কেলের মেয়ে। খেলার সাথী পেয়ে আমি খুবই খুশী। রাজশাহীর পদ্মা নদী আর বালির প্রতি আমাদের দুজনেরই বেশ টান ছিলো ও ভালোবাসতো বালির ওপর গড়াগড়ি খেতে, এভাবেই আনন্দময় এক বছর পার হতে চললো।

তারপর মার একদিন মনে হলো এবার সেটল হওয়া দরকার কোথাও, আমাদের পড়াশোনা নয়তো উচ্ছন্নে যাবে। ২৩ এ এপ্রিল ১৯৯২ আমার ওকে ছেড়ে আসার দিন।তারপর হুহু করে ১২ বছর কেটে যায়।আমরা ঢাকা সেটল হই।

আমার তখন সবে উচ্চমাধ্যমিক শেষ। এই ১২ বছরে হয়তো টিচারদের ভয়ে নয়তো সমাজের চাপে আমি চশমা পরা একটা কম কথা বলা ভদ্র গোছের ছেলেতে পরিণত হলাম। মেডিক্যাল এর প্রিপারেসন নিতে তখন আমি ব্যস্ত। আমার বাবার ইচ্ছে, আমি ফেলে দিতে পারিনা। বাবার তখন রাজবাড়ী পোস্টিং। হঠাত একদিন মা আমায় ডেকে টেলিফোন টা হাতে দিয়ে বললো ” তোর হক আঙ্কেল কে মনে আছে?” ১২ বছর পর আমি সবার মুখ ভুলেও গেছিলাম। হক নাকি দাস ছিলো তা মনে নেই শুধু মনে ছিলো আমার একটা বন্ধুর কথা। আমি বললাম হ্যা , মা আমাকে ফোন টা দিয়ে বললো নে হক সাহেবের মেয়ের সাথে কথা বল। ওই মুহূর্তে আমার কি ফিল হচ্ছিলো সেই ইমোজি টা ফেসবুকেও নেই। আমি ফোন টা ধরলাম।

-হ্যালো জাহিদ চিনতে পারছিস বস? ভাবা যায় কদ্দিন পর তোর সাথে দেখা হবে।
-দেখা? কোথায়?
-যা গাধা ! কাকিমা বলেনি? আমরা আসছি তো তোদের বাড়ি। তারপর সবাই মিলে বান্দরবন বেড়াতে যাবো।
-ও তাহলে বেশ ভালোই হবে।
-তুই কি এরকম কম কথা বলিস নাকি জন্ডিস হয়েছে?
-না মানে কম ই বলি।
-আচ্ছা সামনা সামনি কথা হবে। পরশু যাচ্ছি তোদের বাড়ি।
আমি ফোন রেখে তখন ভাবছি এটা কোন গ্রহের প্রানী ছিলো?
বলে কিনা বস? জন্ডিস? কি এসব
এরই মধ্যে মা বললো তুই কদিন ছুটি পাচ্ছিস।সবাই বান্দরবন যাচ্ছি।

আমার বন্ধুরা সবাই একটা করে গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে নিয়েছিলো শুধু আমি ই ছিলাম কোলবালিশ প্রেমী, তাই একবার হলেও ওকে গার্লফ্রেন্ড করার কথা মাথায় আসলেও ওর ছোটবেলার মুখটার কথা মনে পরে গেলে ক্যামন গা টা গুলিয়ে গেলো। সেই তো রঞ্জিত মল্লিকের মতো ছিলো মুখ। প্রেম কেনো!! ওকে নিয়ে রাস্তা ঘাটেই বেরোনো যাবেনা।

আমার বড় ভাই তখন কানাডা থেকে পড়াশোনা করে। বান্দরবন ট্যুর এর জন্য আমরা জামা কাপড় কিনে ফুল রেডি। বাবা আমাদের সাথে কমলাপুর স্টেশনে দেখা করবে। পরের দিন ওই সকাল ৮ টা নাগাদ বাইরের চেচামেচি তে আমার ঘুম ভেঙে যায়। খালি গায়ে থ্রি কোয়াটার পরে আমিও হাই তুলতে তুলতে বেরিয়ে এলাম। বাইরে তখন হক আঙ্কেল কাকিমা দাড়িয়ে, আমার মা ব্যাগ গুলো রুম এ রাখছে। আমার অর্ধনগ্ন শরীরের দিকে সবাই শক্তি কাপুরের মতো কেনো তাকিয়ে ছিলো তা নিয়ে আমি আজও কনফিউজ। যাই হোক ১২ বছর পর ওর সাথে আমার প্রথম দেখা। এটা কে? কোথাকার মডেল? প্রথমে মনে হলো ফেক প্রোফাইল নাতো? তারপর ভাবলাম তা কি করে সম্ভব।রঞ্জিত মল্লিক কি করে কোয়েল মল্লিক হয়ে গেলো সেই চিন্তায় আমি ওখানে ওর দিকে চেয়ে হা করে দাড়িয়ে রইলাম। আমার মা চেচিয়ে বললো এই টারজান তোর জামা কাপড় নেই? ওরকম হাড়গিলে বডি কাউকে দেখাস না যা জামা পরে ব্রাশ কর। আমি তখনও ভাবছি কি করে এটা সম্ভব? চোখে কাজল,কানে ছোট দুল,না লিপস্টিক ছিলোনা কিন্তু ঠোট দুটো বেশ লাল আর লম্বা আমার মায়ের মতো। আমার দিকে তাকিয়ে মিসা সওদাগর এর মতো হেসে যাচ্ছিলো। আমি শিগগিরি ব্রাশ করে খেয়ে দেয়ে নিলাম। একটা ডি এস এল আর হাতে নিয়ে আমার রুম এ ঢুকে বললো এই তোদের এদিকে নাকি একটা অনেক পুরোনো কেল্লা আছে আমায় নিয়ে যাবি? কিছু ছবি তুলতাম। বিশ্বাস করুন রুম থেকে বেরিয়ে দোতালা থেকে বাইকের চাবিটা এনে বাইক বের করে স্টার্ট দিতে আমার মাত্র সারে ১ মিঃ ১০ সেকেন্ড লেগেছিলো। হয়তো ওটা ছিলো কোনো মেয়েকে প্রথম বাইকে বসানো।

ওর হাত দুটো আমার পিঠে স্পর্শে যেন আমার বুকে কেউ ঘুষি মারছিলো। ক্লাবের সামনের রাস্তা দিয়ে যখন আমার বন্ধুদের সামনে দিয়ে ওকে নিয়ে যাচ্ছিলাম তার আগে আমার লেন্স ওয়ালা চশমা টা খুলে সানগ্লাস পরে নিয়েছিলাম। এক হাতে বাইক চালাতে চালাতে এক হাতে চুল টা ঘুরিয়ে নিলাম।

ও শুয়ে বসে অনেক ছবি তুললো আর আমায় বললো ভাবিস না কিন্তু যে জাস্ট সো আপ মার্কা ফোটোগ্রাফার আমি একটা পত্রিকায় আমার ফোটো ছাপে। আমি বললাম ও তুই তাহলে ফোটোগ্রাফার হবি বড় হলে? ও হেসে বললো কাকা আর কতো বড় হব? দাড়ি উঠবে নাকি আমার? তারপর আমরা বাসায় ফিরে এলাম।

বিকেলে আমার বাড়ির সামনে মেলা বসে গেলো। আমার বন্ধুদের ৩ বছর পর হঠাত আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় আমার সাথে ক্রিকেট খেলার শখ জাগলো। আমি নিচে নেমে গেলাম।
– তোরা মেয়ে দেখিস নি ভাই?
– আরে তুই আমাদের বন্ধুনা?কতদিন ক্রিকেট খেলিনা আমরা, এরকম করছিস কেনো?
– ওরে আমার বন্ধু!কতক্ষণ চলবে এসব ছাইপাঁশ খেলা?
– ছাইপাঁশ? মেয়ে পেয়ে এখন ক্রিকেট ছাইপাঁশ।একটা কথা মনে রাখিস জাহিদ এই ছাইপাঁশ ই কিন্তু তোর বিকেল টাকে রামধোনু করে দিতো।
– নে নে উইকেট পোত। নাটক করিস না।
সন্ধে তে খেলে যখন আমি রুমে ঢুকি তখন আমার গিটার টা নিয়ে দেখলাম ও কিছু একটা বাজাচ্ছে যেটা খুবই বাজে ছিলো।
-এটা কে বের করলো?
-আমি। তুই গিটার বাজাস জাহিদ ?
-হ্যা মাধ্যমিকের পর ছুটির সময় শিখেছিলাম দু মাস।
-কাকিমা বললো তুই নাকি ভালো গানও করিস ?
-হ্যা কিন্তু একা একা।
– আমায় একটা গান শোনা।
-হ্যা কিন্তু কন্ডিসান আছে কিছু
-যেমন?
– আমি যখন গাইবো তখন উলটো দিকে ঘুরে থাকবি ভুলেও আমার দিকে তাকাবিনা
-আচ্ছা তাই হবে।

আমি কোনো মেয়েকে সেদিনই প্রথম গান শোনাই,মেয়ে কেনো আমি কারো সামনেই গাইনা। লজ্জা লাগে।

–তুই অনেক ভালো গান করিস জাহিদ বিশ্বাস কর। মেডিক্যাল পরে কি করবি ?
তুই আর্টিস্ট গুরু।
–নিজেকে এরকম আটকে কেনো রাখিস ? তুই বাংলা অনেক ভালোবাসিস তাই না ?
– হ্যা কি করে জানলি?
-তোর বই এর তাক। আর গানও তুই বাংলা গাইলি তাই।
-হুম

আমার একটা ডায়েরী ছিলো যেটা শুধু আমারই ছিলো। আমি লিখতাম। কোথাও ছাপার জন্য নয় নিজের শান্তির জন্য মোটা মোটা ওই বই গুলো থেকে মুক্তি দিতো আমায় ওই ডায়েরী। ব্যাগ প্যাক করার সময় তাই ওটা ছিলো সবার আগে।

পরের দিন সকাল ৯ টায় ছিলো আমাদের ট্রেন। ট্রেন এ জার্নি আমার প্রিয়। ও তখন ওর ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলে যাচ্ছে সমানে। সুন্দর দেখতে হলেও একটু বোধ হয় পাগল। আমার আবার বার বার হিসু পায় তাই যতবার আমি টয়লেটের দিকে যাই ততবারই মিশা সওদাগর এর মতো ও হাসে। সিংগেল দুটো সিট পেলাম আমি আর ও। প্রথম বার কোনো মেয়ের সাথে আমি একই বগি তে তবে ২ মিটার দূরে।দের দিন পর আমরা বান্দরবন পৌছালাম। বাবা অনেক দিন পর আমার মাকে নিয়ে বেড় হতে পেরে অনেক খুশি।

শেষে বাংলোতে পৌছে আমাদের মধুর যাত্রা শেষ হলো। অদ্ভুত সুন্দর বাংলো টা। আমি রুমে ঢুকে জামাকাপড় চেঞ্জ করছিলাম। জানিনা লক টায় কি প্রবলেম ছিলো তাই না আটকেই আমি উলঙ্গ শরীরে মাথা আচরাচ্ছিলাম। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই ঢুকতে হলো ওকে। আমার টুসটুসে যৌবন বাজারে বিক্রি হয়ে গেলো। পরে অবশ্য ও বলেছিলো ও কিছু দেখেনি। আমি বিশ্বাস ও করেছিলাম ।বান্দরবন ঘুরতে ঘুরতে এভাবে ৭ দিন কেটে গেলো। একদিন রাতে যখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম তখন হঠাত সে অদ্ভুত মুখ নিয়ে হাজির।
-জাহিদ জানিস এখান থেকে জাস্ট ১ কিলোমিটার ওপরে এক রকম অদ্ভুত ফুল ফোটে। আমাকে নিয়ে চল।
– প্লিজ আমায় ক্ষমা কর। আমার বাবা কেটে ফেলবে আমায় জানলে।
-জানবে না পাগল। জাস্ট যাবো আর আসবো প্লিজ চল। প্লিজ প্লিজ প্লিজ!

কাঁধে দু লিটার বোতল সহ ব্যাগ নিয়ে আমি পাঁচিল টপকে বি ডি আর দের কড়া নজর পাশ কাটিয়ে সেই অদ্ভুত ফুলের ছবি তুলতে পৃথিবীর এক আজব ফোটোগ্রাফারের সাথে রাত দুটোর সময় বান্দরবন পাহাড়, বনে বাদাড়ে ঘুরে বেরিয়েছিলাম । মাঝ রাস্তায় ও পকেট থেকে একটা মদের বোতল বের করে ঢকঢক করে গিলে মাস্তি বলে চিৎকার করে উঠলো। একি? কি জিনিস এটা?
-তুই শালা শেষমেশ মাতাল?
-আমি মাতাল নই আমি স্বাধীন।
-তোর সব কিছুতে এতো তাড়া কেনো?
– আছে তাড়া।নে এক ঢোক মেরে নে। মাস্তি।
-হুম তারপর মদ খেয়ে ঘুমিয়ে থাকি তোমার সাথে আমি এখানে।
-আরে খাও। তুমি আর্টিস্ট।এসব না খেলে তুমি বড় হবেনা। তোমার ডায়েরী টা চুরি করে পরেছি। কি একঘর লিখেছিস মামা।
তোর ওই চাঁদ কে নিয়ে লেখা টা আর ওই মাঝিকে নিয়ে আমি মোহিত বন্ধু জাস্ট মোহিত
– ঠিক করিসনি এটা না বলে পড়ে।
-নে দুঃখে মদ খা।
একটা বিষয় কানে লাগলো, ও কখনো তুমি আবার তুই বলছে দেখে।
সেদিন আমার প্রথম সিগারেট আর প্রথম মদ খাবার দিন ছিলো।সিগারেট টান দিয়ে দুজন একসাথে মাস্তি বলে চেচিয়ে উঠলাম তারপর হঠাত
-এই তুই কাউকে চুমু খেয়েছিস?
– চুমু মানে ওই লিপ টু লিপ?
-হ্যা রে বাবা। না নিশ্চয়ই?
-না
-আয় তোকে শেখাচ্ছি?
-তোর নেশা হয়ে গেছে।
-আরে না সত্যি আয়।
মনে মনে চাইছিলাম। কিন্তু একটা ভদ্রতা বলেও তো কিছু হয় ।
আমায় ও চুমু খায়।আমার প্রথম কিস। হাউ ডাস ইট ফিল? সবাই জানে, যদি লেখা সম্ভব হতো তাহলে নিশ্চয়ই লিখতাম। আমি প্রেমে পরেছিলাম জীবনে প্রথমবার। জানিনা ওর কাছে এটা প্রেম ছিলো কিনা কিন্তু আমি ওর পাগলামির প্রেমে পরেছিলাম।বান্দরবনের হাওয়ায়, আকাশে আমি প্রেমে পরেছিলাম। ভেবেছিলাম শেষ দিন বলবো।
ফুলের ছবি,আকাশ ছোঁয়া পাহাড় গুলোর ছবি,আমার ছবি,বাংলোরর সামনে যে চা বিক্রি করতো তার ছবি এসব নিয়ে আমাদের আবার ফিরে আসার সময় চলে এলো। ও আমার সাথে নর্মাল বিহেভ ই করতো। আমি ওকে ডেকে বললাম।
-তোর ফোন নাম্বার ইমেইল আইডি আর ফেসবুক আইডি টা নিয়ে নি আবার কবে দেখা হবে ঠিক নেই।
-ওগুলো তোকে দেবোনা জাহিদ।
কি জিজ্ঞেস করবি? ভাত খেয়েছি কিনা? কোন তরকারি, এসব? তারচেয়ে অন্য কিছু হোক না আমরা দেখা যখন করবো আবার তখন ই কথা হোক? আমি তোকে চিঠি লিখবো। তোকে সব জানাবো আমার আর তোর টা আমি জেনে নেবো। আমি জানি তুই প্রেমে পড়েছিস আমার। এটা প্রেম নারে। ওই জোর করে করা হবে আর কি। যদি অপেক্ষা করিস আমার জন্য তখন বুঝববো এটা প্রেম ছিলো।
-আমি কিছু বলিনি একটা পাগলীর কাছে আর কি ই বা আশা করা যায়?
আমি বাড়ি ফিরে আসি ও বাড়ি ফিরে যায়। ওর নাম্বার ই-মেইল সত্যিই পাইনি আর।

কেটে যায় ২ বছর। আমার মেডিক্যাল টা আর হয়নি। বাবা রাগে আমার গিটার টা বেঁচে দেয় ওই ভাঙাচোরা ওয়ালার কাছে। আমি তখন যুধিষ্ঠির থেকে দুর্যোধন হয়ে গেছি। কিভাবে মেয়ে পটাতে হয় শিখে নিয়েছি। ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়েছি। হোস্টেলে তখন আমি বড় হোনু।
ওটা প্রেম ছিলোনা সেটা অপেক্ষা না করেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম । এর মধ্যে দুটো প্রেম হয়েছে সামনের পাড়ার নেহা আর গুলশানের সেক্সি রুবি ভাবী । টেকেনি একটাও কিন্তু শারীরিক চাহিদা বেশ মিটেছে। বান্দরবনের পাহাড়ের চুড়ায় একটা চুমু শুধু মাঝে মাঝে রাতের বেলায় বুক টাকে শুন্য করে তোলে ।

একটা ফেসবুক পেজে লিখতাম । ৭ হাজার দিয়ে একটা গিটার ও কিনেছিলাম। উদ্দেশ্যহীন জীবন আর কি! একদিন আমার এক বন্ধু সকাল সকাল আমায় ডেকে বললো ভাই একটা চিঠি এসছে তোর নামে। ই-মেইলের দিনে কোন হোনুমান তোকে চিঠি লেখে? আমি বলতেই যাচ্ছিলাম হবে কোনো মাতাল কিন্তু হঠাত উঠে বসলাম । চিঠি? চিঠি?আমি দৌড়ে গিয়ে চিঠিটা নিলাম। ২ বছর পর এটা ওর চিঠি ছিলো। আমার হাত কাপছিলো চিঠির খামটা খোলার সময়। চিঠিতে লেখা ছিলো-
জাহিদ আমি রে। কেমন আছিস? তোকে মাঝে মাঝেই মনে পরে। তোর লেখা গুলো ফেসবুক পেজটায় পড়ি। খুব ভালো লিখিস। গান টা ছাড়িস নি তো? আমি প্যারিসে একটা কলেজে ফোটোগ্রাফি নিয়ে পড়ি।এখানে লাইফ অনেক সুন্দর রে। এবার ভালো রেজাল্ট করেছি আমি। রোজ বিকেলে আমি বের হই একা একাই অজানা অচেনাদের ভিড়ে। নিজেকে মুক্ত লাগে। নিজেকে হারিয়ে ফেলি। তুই ও নিশ্চয়ই ভালো আছিস? মেডিক্যাল টা হয়নি শুনেছি, বাদ দে ওসব তোর জন্য ছিলোও না, তুই রাইটার হবি দেখিস। আবার লিখবো। ভালো থাকিস।
ইতি -সেই আমি।

ওটা কিসের কান্না ছিলো জানিনা কিন্তু কেঁদেছিলাম হাসি মুখেই। আমার লাইফ যেন একটা খুশি থাকার কারন পেলো। আর ফেসবুক পেজটার জন্য আমার লেখা গুলো বেশ ছরালো। লোকাল একটা পত্রিকায় লেখাও শুরু করলাম।

প্রেম?প্রেম আর হলোনা। সব মেয়েকেই ক্যামন একটা বোরিং লাগতো। দেখতে দেখতে কেটে যাচ্ছিলো সময়। আর পর পর বছর। ওর চিঠি আমার লাইফে টুতপেস্ট এর কাজ করতো চকচকে দাত গুলোকে হাসাতে জানতো ওর চিঠি । আমার হোস্টেলের সবাই খুব অবাক হতো এই হোয়াটস অ্যাপের যুগে কোন আদিম মানুষ আমায় চিঠি লেখে, তা নিয়ে ওরা বেশ কনফিউজ। ওর চিঠি পরে আমি জানতাম ও কোন কোন দেশে ঘুরে বেরাতো।

হক আঙ্কেল আর আন্টি একটা অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাবার পর যাযাবর টার আর পিছুটান রইলো না। স্বাধীন অনেক স্বাধীন। আফ্রিকার জঙ্গলে আমার পাগল ফোটোগ্রাফার তখন শঙ্করের মতো ঘুরে বেরায়। যেসব জায়গার নাম বলে সেগুলো আমার গ্লোব টায় খুঁজেও পাইনা। একটা একটা চিঠি এক এক ঠিকানা থেকে লিখতো। আমি কোনোদিন একটা চিঠিও লিখতে পারলাম না।ও আগেই বলে দিতো লিখে লাভ নেই যতদিনে পৌছাবে ততদিনে ওখান থেকে চলেও যাবে।
তারপর হঠাত ওর লেখা বন্ধ হয়ে গেলো। চিরকালের জন্য।আর পাইনি চিঠি।

কেটে গেলো বেশ কটা বছর। আমার বয়স তখন ৩৪। আমার ইন্টারভিউ দিয়ে আমি তখন সবে রুমে ঢুকেছি। পাবলিশার্স দের লম্বা লম্বা তেল মাখানো ভয়েস মেসেজ আসে মোবাইলে। আমার নতুন নোভেল টা তখন সবে ধরেছি। লাইফ অনেক চেঞ্জ হয়েছে এ কটা বছরে আমি তখন অনেক বড় রাইটার। সিনেমাও হয় আমার গল্পের।

নিয়ম করে ডাকবাক্স টা চেক করি রোজ। কিছুই হাতে মেলেনা।কিন্তু সেদিন মিললো। একটা চিঠি।

–জাহিদ আমি রে। যতদিনে চিঠি টা পাবি ততদিনে আমি মরে গেছি আর হয়তো ৪ বছর হয়ে গেছে। চিঠিটা আমার বন্ধু ডেইজি কে দিয়ে গেলাম। ও ৪ বছর পর তোকে পাঠিয়ে দেবে। জাহিদ তোকে একটা কথা বলিনি রে। সরি। আমার যখন ১৭ বছর তখন প্রথম বার কাশতে গিয়ে রক্ত বেরোয়। আমি বেশিদিন বাচতাম না আমি জানতাম। কি করে এতো বছর টেনে দিলাম কে জানে। ক্যান্সার বড় অদ্ভুত রোগ। তুই বলতি না আমার ওতো তাড়া কিসের? তাড়াই তো। সময় তো আমায় সময় দেয় নি রে। তোর ইন্টারভিউ দেখি। বলতাম না একদিন অনেক বড় রাইটার হবি। কিন্তু তোর বাংলাতে লেখার অহংকার টা রয়েই গেলো বল? আলাদা ভাবে ইংলিশ এ বের হয় আমি দেখেছি। এটাই বাঙালির প্রব্লেম যারা ভালো ইংরেজি জানে তারা বাংলা ভালোবাসে আর যারা কম ইংরেজি জানে তারা ভুল ভাল ইংরেজি লেখে। ভালো। অনেক খুশি তোকে নিয়ে। তোকে ভালবাসতাম। আমি আজ লাদাখ এর একটা পাহাড়ের মাথায়। বছরের এই একটা সময় এখানে অনেক সুন্দর একটা ফুল ফোটে। না এসে পারলাম না তোকে অনেক ছবি পাঠালাম হয়তো আর এই পাহাড় থেকে নিচে ফিরবনা। আর হয়তো নেই সময়। তোর জন্য একটা জিনিস রেখে গেলাম। এখানে সবচেয়ে লম্বা গাছটার পাশে যে কবর তার মাথার কাছে নিচে পুতেছি একটা বাক্সবন্দী জিনিষ। এসে নিয়ে নিস। আর শোন একদম কাঁদবি না। তোকে এজন্যই আর লিখতাম না। হাসি মুখে পড়িস। অনেক দিন হয়ে গেছে মরে গেছি বস। তাই আর কেঁদে লাভ নেই। হাসিস আর ভালো থাকিস।
ইতি-সেই আমি।

চোখ টা কিসে আবছা হয়েছিলো? পানিতে ? হতে পারে। কাঁদবো না? অনেক কেঁদেছিলাম কিন্তু তখন ই ছুটেছিলাম লাদাখ, শেষ বারের মতো ওকে পড়তে।
গাছটার নিচে আমার ভাঙা গিটার টা যেটা বাবা কাবারিওয়ালাকে দিয়েছিলো ছিলো। সংগে একটা চিঠি-
এটা আমার কাছে ছিলো জাহিদ। একবার বাংলাদেশে এক অনাথ আশ্রমে ডোনেট করতে গিয়ে পেয়েছিলাম ,পথে এক পুরোনো জিনিস বিক্রির দোকান দেখেই চিনেছিলাম ওটা তোর।তখন থেকেই আগলে রেখেছি। এটাই বাজাস। বিদায় বন্ধু।

ফিরে এলাম ওখান থেকে। আর প্রেম হয়নি আমার। ওকে জীবনে একবারই দেখেছিলাম কিন্তু বয়ে নিলাম সারা জীবন । একটা মেয়ে একটা উন্মাদ মেয়ে আমায় অনেক শেখালো।
গিটার টাকে জড়িয়ে থাকতাম ,ওর গন্ধ ছিলো ওতে
কে ছিলো ও আমার জীবনে ? আমার প্রেমিকা? না কোনোদিন ই না । কি ছিলো ও আমার লাইফে?
আমার প্রথম চুমু? প্রথম সিগারেট? নাকি একগুচ্ছ চিঠি? নাকি একটা স্নিগ্ধ হাওয়া যেটা বইলে আমি শান্তি পেতাম? পাহাড়ের চুড়োয় প্রথম পাগলামি ছিলো, ও আমার প্রথম গান শোনানো ছিলো ও,আমার ডাকবাক্স ছিলো, ও আমার ভাঙা গিটার ছিলো, ও আমার কলম ছিলো, ও আমার ডায়েরী ছিলো, ও আমার প্রথম লিপ (ঠোট) ছিলো।
ওহ হ্যা ওর নাম ছিলো…. লিপ।

২৩/০৪/২০১৮ ইং।
রাজবাড়ী।
জাহিদ শরীফ নাসিম।