খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আবারও মানববন্ধন করেছে বিএনপি।সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে। সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।বুধবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টা নয়া পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।গত ৮ ফেব্র“য়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়াকে ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। তার মুক্তির দাবিতে এর আগে ১২ ফেব্র“য়ারি ও ৮ মার্চ দুই দফায় ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন করে বিএনপি।
বুধবার তৃতীয় দফায় মানববন্ধনের এ কর্মসূচি সারাদেশের মহানগর ও জেলা সদরেও হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।এই কর্মসূচি ঘিরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই নেতা-কর্মীরা সমবেত হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে- ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকেন। তাদের হাতে খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও দেখা যায়। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গত ২২ এপ্রিল থেকে বিএনপি নতুন যে সাত দিনের কর্মসূচি শুরু করেছে, এটি ছিল তার তৃতীয় দিনের কর্মসূচি।মানববন্ধনের এ কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই বিএনপি কার্যালয়ের আশে-পাশে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে পুলিশ।মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেই। তাই আমরা সব দল-মতের লোককে আহ্বান জানাবো দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে ঐক্যবদ্ধ হতে। এর কোনো বিকল্প নেই। বিএনপির এ নেতা বলেন, এই সরকার গণতন্ত্রের মুক্তির আন্দোলনকে রুখতে খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। কারণ তিনি বাইরে থাকলে সরকারের একদলীয় শাসন দীর্ঘ করতে পারবে না। ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা ভোট করতে পারবে না। মানসিক ভাবে নির্যাতন করতে খালেদা জিয়াকে পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, এখন তাকে (খালেদা) দল ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি খালেদা জিয়াকে তার নিজস্ব চিকিৎসকদের চিকিৎসা নিতেও দিচ্ছে না।দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রেখেছে। কারণ সরকার চাইছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আবার একটি প্রহসনের নির্বাচন করতে। কিন্তু এবার তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হবে না। তিনি বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারেরে অধীনে আগামী নির্বাচন হবে। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমরা তার নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করবো। মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের কথা বলার অধিকার নেই, কথা বলার জায়গা নেই।আমরা কোথাও সভা সমাবেশ করতে চাইলে আমাদের মাঠ দেওয়া না। কোথাও ইসলাম আলমগীর সভা সমাবেশ করতে চাইলে আমাদের ওপর হামলা নির্যাতন করা হয়।নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন,আপনারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সবাইকে সংগঠিত করুন। সময় আসবে আমাদের রাজপথে কঠোর আন্দোলন করতে হবে। তখন আমারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সরকারকে পরাজিত করে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবো।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে এখন একটি স্বৈরশাসক দেশ পরিচালনা করছে। যাদের কাছে বিরোধীদলের কোনো রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই। তারা বিএনপিসহ বিরোধীদলকে কোনো সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। সব নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে দেয় না। তিনি বলেন, সরকারের অপশাসনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে স্বৈরাচারী দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকারের দুঃশাসন দীর্ঘ করতে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেশকে বিকলাঙ্গ করেছে।আমীর খসরু বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে বাইরে রাখতে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে।এখন তারা (ক্ষমতাসীন দল) তারেক রহমানের পেছনে লেগেছে, তাকে ছোট করতে। কিন্তু সরকারকে বলতে চাই এসব করে কোনো লাভ হবে না, জনগণের জোয়ারে ষড়যন্ত্রের সব বাঁধ ভেঙে যাবে। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন- ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকনসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষকদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।