কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেছেন, কারাগারের সকল বন্দিদের একটি করে বালিশ দেয়া হবে। বর্তমানে সাধারণ বন্দিদের তিনটি করে কম্বল দেয়া হলেও কোন বালিশ দেয়া হয় না। সেখান থেকে একটি করে কম্বল কমিয়ে তার পরিবর্তে প্রতিবন্দিকে একটা করে বালিশ দেয়া হবে। বন্দিদের জন্য বালিশ ক্রয় করতে বর্তমানে টেন্ডারের কাজ চলছে। আশা করছি, আগামি অর্থবছরেই আমরা এটা দিতে পারব।

তিনি বলেন, বর্তমানে শুধু ভিআইপি ও অসুস্থ্য বন্দিদের বেলায় দু’টি কম্বলের সঙ্গে একটি বালিশ দেয়া হলেও সাধারণ বন্দিদের কোন বালিশ দেয়া হয় না। তাদের শুধু তিনটি করে কম্বল দেয়া হয়। কিন্তু আগামি অর্থবছর থেকে সাধারণ বন্দিদের একটি কম্বল কমিয়ে দুইটি কম্বল ও একটি করে বালিশ দেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্যারেড গ্রাউন্ডে ৫১তম ব্যাচের কারারক্ষী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সমাপনী কুজকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে যোগ দিতে এসে সাংবাদিকদের ওইসব কথা বলেন।

কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ঔপনিবেশিক আমলের প্রিজন অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে আমরা পরিচালিত হচ্ছিলাম। আমাদের মাঝে ঔপনিবেশিক মনোভাবও ছিল। আমরা তা ভুলে যেতে চাই। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনা ধারণ করে নতুনভাবে আমাদের কারাগারগুলো পরিচালনা করতে চাই। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগারে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের প্রায় দুইশ বছরের পুরাতন যে প্রিজন অ্যাক্ট আছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় সেটাকে নতুন করে প্রণয়ন করার কাজ চলছে। আমরা আশা করছি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পার্লামেন্টের সভায় অনুমোদন লাভ করবে। একই সঙ্গে জেল কোডও সেভাবে সংশোধিত হবে। তাতে সেবার মান আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে।

কারা মহাপরিদর্শক আরো বলেন, বিপথগামী মানুষদের চারিত্রিক সংশোধনের লক্ষ্যে দেশের কারাগারসমুহকে কল্যাণমূখী প্রতিষ্ঠান ও সংশোধনাগারে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দক্ষতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। কারা বন্দিদের ও প্রশিক্ষনদানের মাধ্যেমে দক্ষতা বৃদ্ধির করা হচ্ছে। আমাদের কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা বাইরের বিভিন্ন দেশের কারাগারগুলো পরিদর্শণ করছেন এবং তাদের থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের কারাগারগুলোকে আরো উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। আগামি মে ও জুন মাসে দেশের বাইরে বিভিন্ন কারাগারের পরিচালনা ও পূনর্বাসন প্রশিক্ষন প্রক্রিয়াগুলো স্বচক্ষে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশ গমনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। বাংলাদেশ কারাগারের মোট ৭২জন কারাকর্মকর্তা-কর্মচারি বিদেশ গমন করবেন। তারা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কোরিয়াসহ আটটি দেশে যাবেন তারা। এ ভ্রমনের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জনে মাধ্যমে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাব।

তিনি বলেন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ এম্ব্রয়ডারি ও মোজা তৈরির নতুন আধুনিক যন্ত্র কেনা হয়েছে। কারাবন্দিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করা হবে। পরে তাদের দিয়ে উৎপন্ন পণ্য বাইরে বিক্রয় করা হবে এবং এতে যে অর্থ পাওয়া যাবে তার পঞ্চাশ শতাংশ পারিশ্রমিক হিসেবে বন্দিদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়ে গেছি। এখন অর্থ বরাদ্দটা আসলে এবং নীতিমালা প্রণয়ণের পরই আগামি দুই মাসের মধ্যে হয়ত এটা আমরা বন্দিদের দিতে পারব। তাতে করে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং তাদের পরিবারের উপর যে নির্ভরশীলতা তা কমবে। মানসিকভাবে তারা আরো সুস্থ হবে।

কারা মহাপরিদর্শক বৃহস্পতিবার দুপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ চত্বরে বন্দি পূণর্বাসন প্রশিক্ষণের জন্য স্থাপতি এম্ব্রয়ডারি ও মোজা তৈরি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এসময় অতিরিক্ত কারা মহা-পরিদর্শক কর্ণেল মো. ইকবাল হাসান, কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. বজলুর রশীদ, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব কুমার দেবনাথ, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১এর সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে কারাচত্বরে মহাপরিদর্শক ৫১তম ব্যাচের কারারক্ষীদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের সমাপনী কুজকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং নতুন তিন কারারক্ষীকে পুরস্কৃত করেন। তাদের মধ্যে সর্ব বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী মো. আল আমিন মল্লিক, দ্বিতীয় হন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী মো. সাব্বির হোসেন এবং বেষ্ট ফায়ারারের পুরস্কার পান নেত্রকোনা জেলা কারাগারের মো. কিবরিয়া হাসান রবিন। ৫১তম ব্যাচে ৩১৮জন কারারক্ষী ২৬সপ্তাহ ব্যাপী কোর্সে অংশ নেন। এ প্রশিক্ষণ শুরু হয় ২০১৭সালের ২৪ অক্টোবর।