হুমকিতে ভয় পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের না জানিয়ে অপহৃত শিশু মিজানুর রহমান সায়ানকে ১৯ লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে উদ্ধার করেছিল তার বাবা। এরপর তার বাবা এ ঘটনাটি র‌্যাবে অভিযোগ করে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার ২০ দিন পর সেই অপহরণকারী চক্রকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। উদ্ধার করে মুক্তিপণের ১৪ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার দুপুরে কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। র‌্যাব জানায়, সায়ান পরিবারের সঙ্গে রূপনগরের বাসায় থাকত। সে স্থানীয় এমডিসি মডেল ইনস্টিটিউটের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। অন্যান্য দিনের মতো গত ২৭ মার্চ বিকাল ৪টার দিকে সে বাইসাইকেল নিয়ে বের হয়। সাধারণত সে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এলেও ওই দিন আর ফিরে আসেনি। খোঁজ-খবর করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সায়ানের বাবার মোবাইল ফোনে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ফোন করে জানায়, সায়ানকে অপহরণ করা হয়েছে। সায়ানের মুক্তির জন্য ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সে। টাকা না দিলে সায়ানকে হত্যার করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। ওই রাতে অপহৃত সায়ানের চাচা হাবিবুর রহমান রূপনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে র‌্যাব ৪-এর কাছে লিখিত অভিযোগও দেন। এর মধ্যে র‌্যাব ও পুলিশকে না জানিয়ে সায়ানের পরিবারের সদস্যরা অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ১৯ লাখ টাকার বিনিময়ে তারা সায়ানকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। তবে র‌্যাব তদন্ত অব্যাহত রাখে। শেষ পর্যন্ত মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারী চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়। গত রবিবার রাতে মিরপুর ১১ নম্বর থেকে ওই চক্রের চার জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানিয়েছে, অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা নাদিমের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। সায়ানদের গ্রামের বাড়িও মুন্সীগঞ্জে। সায়ানের চাচার অফিসে চাকরি করত নাদিম। দেড় বছর ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে সে সায়ানদের পরিবারের অনেক তথ্যই জানত। র‌্যাব প্রথমে তাকেই তার পল্লবীর বাসা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তার সহযোগী আসিফকে গ্রেফতার করে। তার বাসাও পল্লবীতে। ওই বাসায় মুক্তিপণের ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সঙ্গে মুক্তিপণের টাকা থেকেই কেনা দামি দু’টি মোবাইলও ছিল।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নাদিম ও আসিফ জানিয়েছে, তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ২০১৪ সালে তারা জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। পরে পড়ালেখা ছেড়ে তারা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। সায়ানকে অপহরণের পরিকল্পনার বিষয়ে নাদিম জানায়, দুই মাস আগে তারা ধনী পরিবারের সন্তানকে অপহরণ করে সহজে বেশি অর্থ আয় করার পরিকল্পনা করে। তারা টার্গেট হিসেবে নেয় সায়ানকে। এ কাজে সহায়তা করার জন্য তারা সায়ানের বাবার অফিসের অফিস সহকারী মো. নাঈম হাওলাদারের পরামর্শ নেয়। র‌্যাব জানায়, ঘটনার দিন সায়ান বাসা থেকে বের হলে আসিফ ও নাদিম তাকে বুলডগ প্রজাতির কুকুর দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অপহরণ করে।