আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ও ডাঙ্গী ইউনিয়ন এবং সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নবাসীর মধ্যে দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে।পুলিশ ১৭টি টিয়ার শেল ও ১৩৭টি রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে কৃষ্ণপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকায়।এ সংঘর্ষে নিহতের নাম মান্নান সিকদার মানু (৫৫)। তিনি নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের হাজী কছিমদ্দিন সিকদারের ছেলে।স্থানীয়রা জানান, এলাকার আধিপত্য নিয়ে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন ফকিরের সঙ্গে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইউম হিরু চৌধুরীর বিরোধ চলে আসছিল। সাবেক চেয়ারম্যানের গ্র“পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আখতারুজ্জামান তিতাস।নতুন বাংলা বছর ১৪২৫ সালের কৃষ্ণপুর হাটের ইজারা পান আখতারুজ্জামানের সমর্থক কুদ্দুস সরদার। গতবার এ হাটটি ইজারা নিয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন নিজে। এ বছর বিল্লার হোসেনের ভাই ইনজামুল হক মিঠু হাটের ইজারা নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পূর্বের বিরোধ ও হাটের ইজারা নিয়ে গত ১০ এপ্রিল থেকেই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা চলে আসছিল।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ৬টা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে। এ সংঘর্ষে নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ও ডাঙ্গী ইউনিয়ন এবং সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের দুপক্ষের আনুমানিক দুই সহ¯্রাধিক লোক ঢাল, সড়কি, বল্লম, ট্যাঁটা ও ইটসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়।
ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে শৈলডুবি, পশ্চিম ভাষাণচর, উত্তর ভাষাণচর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের লোক অংশ নেয়। সাবেক চেয়ারম্যানের পক্ষে রথখোলা, নিজগ্রাম, রামনগর, তালমা, রাধানগর, ভবুকদিয়া, ডাঙ্গীসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজন অংশ নেয়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে।এ সংঘর্ষের সময় সকাল ৭টার দিকে কৃষ্ণপুর বাজারে গিয়ে প্রতিপক্ষের কোপে নিহত হয় সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থক মান্নান সিকদার মানু (৫৫)। সংঘর্ষে দুপক্ষের অন্তত অর্ধশত লাক আহত হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন পুলিশের গুলিতে আহত হন। এছাড়া পুলিশের আট সদস্য ইটের আঘাতে আহত হন।সংঘর্ষের সময় কৃষ্ণপুর বাজারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকদের অন্তত ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পরে পুলিশ এসে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন ফকির বলেন, গত রোববার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর শহরে কোর্ট এলাকায় আমার ভাইয়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বিকাল ও সোমবার সকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থক আকতারুজ্জামান তিতাস বলেন, গত বছর ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল ফকির কৃষ্ণপুর বাজারের ইজারা পান। এবার আমার এক সমর্থক বাংলা নতুন বছর থেকে কৃষ্ণপুর বাজারের ইজারা পেয়েছেন। বিল্লাল ফকিরের ভাই শিডিউল জমা দিয়েও ইজারা পায়নি। গতকাল ছিল ওই বাজারের প্রথম হাট। আমারা যাতে হাটের ইজারা ঠিকমতো তুলতে না পারি এ জন্য ভাইয়ের ওপর কথিত হামলার গুজব ছড়িয়ে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে ইউপি চেয়ারম্যান।নগরকান্দা থানার ওসি সৈয়দ লুৎফর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ফরিদপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে।