কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় ৮ জন নিহতের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরের দিকে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন করলে আদালতের বিচারক জেসমিন আরা বেগম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আগামী ২৩ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী নাজমুস সাদাত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ১০ এপ্রিল পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কুমিল্লার ৫ নং আমলি আদালতে জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাইন বিল্লাহ জামিন নামঞ্জুর করেন। এ প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সোমবার অন্তবর্তীকালীন জামিনের আবেদন করেন।মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে ২০ দলীয় জোটের অবরোধের সময় চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে একটি বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা।এতে ৮ যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যান, আহত হন ২০ জন। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৭৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ছয়জন নেতাকে হুকুমের আসামি করা হয়। ৭৭ জন আসামির মধ্যে তিনজন মারা যান, পাঁচজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়াসহ অপর ৬৯ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন চার্জশিট দাখিল করেন।এদিকে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ও বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন আগামী ৮ মে আসামির সশরীরে উপস্থিতিতে শুনানির জন্য আদেশ প্রদান করেছেন নড়াইলের আদালত। সোমবার দুপুরে নড়াইল সদর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদুল আজাদ এ আদেশ দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন সিকদার যুগান্তরকে বলেন, নড়াইলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার জামিনের আবেদন করলে আগামী ৮ মে শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।মামলা পরিচালনার জন্য ঢাকা থেকে আগত বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার ও অ্যাডভোকেট শাহাদৎ হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সমন জারি করেন আদালত। সমন গ্রহণ না করায় ২৩ আগস্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন একই আদালত।মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া একই সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে তাকে (বঙ্গবন্ধু) ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি স্বাধীনতা চাননি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি। তার এই বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় প্রচার হয়।
মামলার বাদী নড়াইলের জেলা পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নড়াগাতি আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ নেতা ও নড়াগাতি থানার চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে বসে এ খবরটি পড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ হন। পরে রায়হান ফারুকী বাদী হয়ে ২৪ ডিসেম্বর (২০১৫) দুপুরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইল সদর আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।এদিকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামে নড়াইলের আদালতে ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে আরও একটি মানহানি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে বিতর্কিত বক্তব্যের অভিযোগে ওইদিন (২৯ ডিসেম্বর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নামেও একটি মানহানি মামলা দায়ের করা হয়।মামলা দুটি দায়ের করেন শহীদ শেখ জামাল জাতীয় স্মৃতি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কালিয়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ আশিক বিল্লাহ।