আবহমান বাংলার সংস্কৃতির সবচে বড় মাইলফলক পহেলা বৈশাখ নগরবাসীকে প্রাণে প্রাণ মেলাবার সুযোগ করে দেয়। আর সেই সুযোগে শনিবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান এবং মানিক মিয়া এভিনিউ ছিল উৎসবমুখর। তবে বিকেলে বৈশাখের প্রথম বেরসিক বৃষ্টিতে সেই উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়েছে। এক কথায় যাকে বলে ‘হরিষে বিষাদ’।উৎসবমুখর মুখগুলো মুহূর্তে গোমড়া হয়ে যায়। অনেকে ছোটোছুটি করে গাছের নিচ কেউবা দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠছে। বৈশাখের বিকেলে প্রিয়জনকে নিয়ে সবেমাত্র মধুর আলাপনে সময় কাটাতে শুরু করেছে এমন সময় বেরসিক বৃষ্টির হানা। বলা যায় বড়ই আনরোমান্টিক বৃষ্টি!
পহেলা বৈশাখে ঝড়-বৃষ্টিও যেন বাঙালি সংস্কৃতির অংশ, সেটার জানান দেয় বিকেলের বৃষ্টি। মানিক মিয়া এভিনিউতে এমনিতেই ছুটির দিনে মানুষের ভিড় জমে ওঠে। তার উপর যদি বৈশাখের মতো বাঙালি উৎসবের দিন হয় তাহলে তো কথাই নেই।বিকালের শেষ প্রান্তে বাঙালির প্রাণের উৎসবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি। এতে উৎসবের আমেজে অনেকটা ভাটা পড়ে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। পরে সেটি অঝোর ধারায় রূপ নেয়। এসময় উৎসবের আমেজে থাকা মানুষ ছোটাছুটি করে খোলা জায়গা থেকে সরে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।বৃষ্টিতে আটকে পড়া মানুষ যেন বাসায় ফিরতে পারে সেজন্য কাকরাইল-মৎস্য ভবন-প্রেসক্লাব-পল্টন রুট যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এই রুটে সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
স্ত্রীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম । বৃষ্টির জন্য আর এগুতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ভাই আর আগাতে পারলাম না। পাঁচটার পর তো নাকি ঢুকতে দেবে না। সাড়ে ৪টা থেকে এখানে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছি। আর মনে হয় সম্ভব হবে না। নাজমূল হোসেনের মতো অনেকে রাজধানীতে বৃষ্টির মধ্যে আটকা পড়েছেন।এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে শনিবার রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় দিনের যেকোনো সময় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, বাতাসে প্রচুর আদ্রতা ছিল এবং একই সঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তাই এই বৃষ্টি। এর আগে শুক্রবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। এর প্রভাবে দুই দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবারও দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার দুপুরের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর পাশপাশি আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। শনিবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বাতাসের আদ্রতা ছিল ৫৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।এদিকে নববর্ষ উদযাপন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, বাংলা একাডেমি, শাহবাগ, রমনা পার্ক, ধানমন্ডি, বনানী, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বৃষ্টির কারণে দর্শনার্থীরা চলে যেতে দেখা গেছে। এছাড়া এসব অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাস্তায় বসে থাকা বাহারি পণ্যের বিক্রেতাদেরকেও চলে যেতে দেখা গেছে।রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গতরাতে আলপনা এঁকে বাংলা নতুন বর্ষ উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়।সকাল থেকে সেই আলপনাকে সামনে রেখে মানুষজন দলবেঁধে ছবি তোলেন। দুপুরে ফাঁকা রাস্তায় বসে ছবি তুলছেন অনেকে, রাস্তায় বাইক রেখে বন্ধুবান্ধব সদলবলে, আবার কেউ কেউ সপরিবারে ছবি তোলায় ব্যস্ত সময় কাটালেও বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সব আনন্দই ভেস্তে গেছে।