সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের শক্তি ছাড়া বাংলাদেশে কারো অস্তিত্ব থাকার কোন সুযোগ নেই। যদি এ জায়গাটিতে আমরা আপোষ করি তাহলে চিরকালই আমরা পথভ্রষ্ট হব। এই জায়গাটিতে আপোষ করার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশে ক্ষমতায় যে থাকবে তাকেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হতে হবে, যে বিরোধীদলে থাকবে তাকেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হতে হবে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতাতেও থাকতে হবে, বিরোধীদলেও থাকতে হবে। যারা এদেশের রাজনীতি করবেন, যারাই এদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেবেন, তাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার সুযোগ নেই।

মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের বোর্ডবাজারস্থিত জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট হলে আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। অনুষ্ঠানে মূলবক্তা ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

মন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির সমন্বয় করতে হবে। আজকের শিক্ষা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে যদি রাজনৈতিক সমন্বয় আমরা ঘটাতে না পারি, তাহলে আমরা যে উন্নত বাংলাদেশটা, যে মানবিক বাংলাদেশটা, যে মুক্ত চিন্তার বাংলাদেশটা গড়তে চাই সেটা গড়া কঠিন হবে।

তিনি আরো বলেন, আগে রাজনীতিটা ছিল অভিজাত শ্রেণীর মানুষদের কাছে – রায় বাহাদুর, খান বাহাদুর জমিদারদের হাতে। এরাই দল গঠণ করতেন, এরাই নীতি নির্ধারণ করে দিতেন দেশ কিভাবে চলবে, মানুষ কাকে ভোট দেবে ইত্যাদি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই জায়গাটিতে আঘাত হানলেন। তিনি জেলা পর্যায় থেকে মফস্বল থেকে খুঁজে খুঁজে নেতাদের রাজনীতিতে তুলে এনেছেন। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজকে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত করেছেন, যেটা আগে কখনও ছিল না। শুধু তাই নয়, তিনি রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকেও প্রবলভাবে উপস্থাপন করেন। যেটি আগে ছিল না। আগে ছিল ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রভাগ। সৌদি আরব থেকে মরক্কো পযন্ত সমস্ত ভ’খন্ডতে কিন্তু শতকরা ৯৯ভাগ মুসলমানদের বাস। শুধু তাই নয়, তাদের অধিকাংশদেরই ভাষাও কিন্তু এক আরবি। এসমস্ত ভ’খন্ডই একটা দেশ হওয়া উচিত ছিল। বাস্তবে কি তা হয়েছে। হয়নি। ভাষাও কিন্তু মানুষকে একত্রিত করতে পারেনা। তবে এক্ষেত্রে স্বদেশ চেতনা ও সংস্কৃতি চেতনার গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখতে পারে।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, বঙ্গবন্ধু মনে-প্রাণে একজন ধার্মিক মানুষ ছিলেন। কিন্তু ধর্মটা দেখাবার কোন দরকার তার কাছে মনে হয়নি। কিন্তু আজকাল এমনটা হচ্ছে ধর্মটা দেখাতে হবে, যে আমি কতটা ধার্মিক। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা সংবিধানের পাতায় থাকবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি খুব কমই চর্চিত হচ্ছে। ধর্মের সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহারে আমাদের আপত্তি আছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, “বাঙালির হাজার বছরের জাতীয় মুক্তির আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন ও সংগ্রাম যার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সফল পরিণতি লাভ করে, তিনিই হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। লক্ষ্য অর্জনে আপোসহীন ও নীতির প্রশ্নে অবিচল থাকা এবং ত্যাগের আদর্শই হচ্ছে আমাদের জন্য বঙ্গবন্ধুর বড় শিক্ষা। বঙ্গবন্ধু মুজিব চিরঞ্জীব।”