বিয়ের দুই বছরেই ভাঙ্গনের করুন সুর বাজছে কিশোরী বধু সাজেদা বেগমের সংসারে। যেন ঝড় বইছে। স্বামী আল-আমিনের মন যোগাতে, সংসার আগলে রাখতে স্বামীর পরকীয়ার সম্পর্ক পর্যন্ত মেনে নেয়। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। যৌতুকের একটি মোটর সাইকেলের দাবি পুরন করতে না পারায় শেষ মারধর চরম পর্যায়ে পৌছে। মারধর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু শেষ দফায় নির্দয়, বর্বর নির্যাতনে প্রায় চার ঘন্টা অচেতন পড়ে থাকে। কিশোরী সাজেদার শরীর এখন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আঘাতে আঘাতে শরীরে ক্ষতের যেন শেষ নেই। কালো ছোপ ছোপ অসংখ্য দগদগে ক্ষত স্বাক্ষ্য বহন করছে। এখন স্বামী নামটি তাকে বিষিয়ে তোলে। একমাত্র সন্তান ৬ মাসের মুজাহিদকে নিয়ে অবশেষে ঠাঁই হয়েছে কলাপাড়া হাসপাতাল। অভাবী বাবা জাহাঙ্গীর মৃধার সংসারে বোঝা হয়ে ঝুলছে। স্বামীর সংসার এখন দুঃসহ যন্ত্রনার স্মৃতি হয়ে আছে অসহায় সাজেদার। কোন কিছু জানতে চাইলেই দুচোখের অশ্র“ ঝরায়।
সাজেদা জানায়, ক্লাশ টেনে পড়ার সময় ২০১৬ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি।বাবা তাকে বিয়ে দেন। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে বাড়ি। তালতলী উপজেলার হরিনখোলা গ্রামের আলী আকবর আকনের ছেলে ভাড়াটে হোন্ডাচালক আল-আমিন আকনের সঙ্গে বিয়ে দেয় কিশোরী সাজেদার। বিয়ের সময় সাধ্যমতো সবকিছু দেয় সাজেদার বাবা। বিয়ের তিন/চার মাস পরেই আংটি ছোট হয়েছে এমন অজুহাতে মারধর শুরু হয়। এরপরে দুই দুই বার পরকীয়ার সম্পর্কে বাধা হয় সাজেদা। তাতেও মারের মাত্রা বেড়ে যায়। সাজেদা জানায় শ^শুর-শাশুড়ি তাকে না মারলেও কখনও বাধা দেয়নি ছেলের এমন অপকর্মে। মেয়ের সংসারের সুখ-শান্তি টেকাতে দুইটি গরু বিক্রি করে জামাইকে আর্থিক যোগান দেন জামাইকে। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। সবশেষ মার্চ মাসে একটি হোন্ডার জন্য কয়েক দফা মারধর করা হয় সাজেদাকে। তারিখ জানেনা সাজেদা। শুধু জানে দিনটি মঙ্গলবার। বিকালে বেধড়ক পেটানো হয়। অচেতন অবস্থায় থাকে প্রায় চার ঘন্টা। কোন চিকিৎসা পর্যন্ত করানো হয়না। পরেরদিন সাজেদাকে আনার জন্য গেলে দেয়া হয়না। এক পর্যায়ে সাজেদা ২৫ মার্চ নিজেই ছয় মাসের সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন। এরপরে ঠিকানা হাসপাতাল। শরীরের সর্বত্র আঘাতের ক্ষত। ককিয়ে ওঠে একপাশ থেকে অপর পাশে যেতে। ফর্শ রঙের মুখাবয়বের সাজেদার মুখ এখন মলিন হয়ে গেছে। শুধু এইটুকুই বলছে, আমি আর যামুনা।’ স্বামীর সংসার এখন তার কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়ে আছে। সাজেদার স্বামী আল-আমিন মারধরের কথা অস্বীকার করে জানান, তিনি সুস্থ সাজেদাকে তার বাবার বাড়িতে বেড়ানোর জন্য পাঠিয়েছেন।