বিএনপি নেতাদের লজ্জা-শরম কম বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি ধিক্কার জানাই বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে যাদের সাজা হয়েছে, তাদের গাড়িতে বিএনপি তুলে দিয়েছিল লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু থাকতে পারে না। তবে ওদের লজ্জা-শরম একটু কম। রোববার চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা তো স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এটাই তারা মেনে নিতে পারে না। আপনারাই তুলনা করে দেখুন, পঁচাত্তরের পর থেকে যারা ক্ষমতায় ছিল, সেই জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়াÑকেউ বাংলাদেশের কোনও উন্নতি করতে পারেনি। আপনাদের চাঁদপুরে কী উন্নতি তারা করেছে? তাদের উন্নতি হয়েছে একটাই, দুর্নীতির উন্নতি। তারা বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। বাংলাদেশের মাথা হেট করেছে বিশ্ব দরবারে। নিজেরা টাকা পাচার করেছে বিদেশে। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের টাকা ধরা পড়েছে। ঘুষ নিয়ে আমেরিকার ফেডারেল কোর্টে ধরা পড়েছে। সিঙ্গাপুরে পাচার করেছে, সে টাকা ধরা পড়েছে। কিছু টাকা আমরা ফিরিয়ে এনেছি।শেখ হাসিনা বলেন, এতিমখানার জন্য টাকা এসেছে, বিদেশ থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে এতিমের জন্য। একটা টাকাও এতিমের হাতে যায়নি। সে টাকা সব লুটপাট করে খেয়েছে। আজকে এতিমের টাকা চুরির দায়ে সাজা ভোগ করছেন খালেদা জিয়া। তার জন্য নাকি আবার আন্দোলন করে!’ তিনি বলেন, ‘কোরআনে আছে, এতিমের হক কেড়ে নিও না। এতিমকে দাও। অথচ সেই অপকর্মটা করতেও তারা পিছ পা হয়নি। তাদের লোভ এত বেশি যে, লোভের মাত্রাটা ছাড়িয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা নূহ নবির কিস্তি, নৌকা মানবজাতি, পশু-পাখি সব রক্ষা করেছিল। এই নৌকা বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দেয়, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দেয়, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তাদের দ্বারা উন্নয়ন হবে না। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাই।জনসভায় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়ে বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট চাই।
নৌকায় ভোট দিতে সমবেত জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট দেবেন কিনা দু’হাত তুলে ওয়াদা করেন।এসময় হাজারো জনতা দু’হাত তুলে ধরে।জনসভাস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন। এর মধ্যে ২৫টি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ২৩টি উদ্বোধন।২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরো বলেন, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার।২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা জয়ী হয়েছিলাম বলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ছিল।সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশে শান্তি চাই। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখবে, সুপথে থাকবে।আমরা চাই দেশের উন্নয়ন। আমরা খুন-খারাপি চাই না। দেশের মানুষ যেন শান্তিতে থাকে তাই চাই। শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিলেই দেশের উন্নয়ন হয়।বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি-খালেদা জিয়াকে ধিক্কার জানাই। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যারা অভিযুক্ত তাদের হাতে লাল পতাকা তুলে দিয়েছে। ওদের লজ্জা-শরম কম। ওরা তো বাংলাদেশ সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে না।পাঁচাত্তরের পর থেকে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তো বাংলাদেশের উন্নতি করতে পারেনি। তাদের একটাই উন্নতি ছিল, তা হলো দুর্নীতির উন্নতি।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো সুস্থ মানুষ, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে? ওই খালেদা জিয়া তার অফিসে ৯২ দিন বসে হুকুম দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে।আমরা চাই না, এভাবে আর মানুষ পুড়ে মরুক।চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, চাঁদপুরের চার সংসদ সদস্য দীপু মনি, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।