বছর খানেক আগে চাকরির খোঁজে ঢাকায় আসেন সঞ্জীব চিরান। খালা সুজাতা চিরানের (৪২) বাসায় কিছুদিন থাকেন। তখন খালার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় সঞ্জীবের। এরপর থেকেই প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এক মাস ধরে তিনি তাঁর নিজের খালাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গত সোমবার তিন বন্ধুকে নিয়ে উত্তরার একটি বাসায় পরিকল্পনা করেন সুজাতাকে খুন করার। ছুরি দিয়ে আঘাত করে সুজাতার মৃত্যু নিশ্চিত করেন ওই চারজন। পরে সুজাতার মা বেসেথ চিরান (৬৫) ঘরে ঢুকে পরলে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তাঁরা। এরপর বাসা থেকে বের হয়ে যান।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র্যাব) মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। র্যাব জানিয়েছে, রাজধানীর গুলশানের উত্তর কালাচাঁদপুরে সুজাতা চিরান ও তাঁর মা বেসেথ চিরান হত্যার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী সুজাতার ভাগ্নে সঞ্জীব চিরান ও তাঁর তিন বন্ধুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। অন্য তিনজন হচ্ছেন প্রবীন সাংমা, শুভ চিসিম ওরফে শান্ত এবং রাজু সাংমা ওরফে রাসেল।
রাজধানীর গুলশানের উত্তর কালাচাঁদপুর এলাকার ‘ক-২৫’ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলা ভবনের চার তলার দুই রুমের ফ্ল্যাট থেকে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে গারো নৃ গোষ্ঠীর বেসেথ চিরান (৬৫) ও তাঁর মেয়ে সুজাতা চিরানের (৪২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বেসেথ চিরানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর খাটের নিচে ঢুকিয়ে রাখা হয়। আর সুজাতা চিরানকে ফেলে রাখা হয় মেঝেতে।
নিহত সুজাতার স্বামী আশিষ মানকিনের করা হত্যা মামলায় সঞ্জীবকে প্রধান আসামি করা হয়। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় র্যাব-১ এর একটি দল শেরপুর থেকে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে র্যাব জানিয়েছে।
উইং কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, নিহত সুজাতার স্বামী আশিষ মানকিন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। তাঁদের তিন মেয়ের মধ্যে একজন গ্রামে থাকে। বাকি দুইজন একই বাসায় থাকেন এবং বিউটি পার্লারে কাজ করেন। সুজাতার বোনের ছেলে সঞ্জীব বছর খানেক আগে চাকরির খোঁজে ঢাকায় এসে ওই বাসায় কিছুদিন অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর থাকা-খাওয়া বাবদ মাসে চার হাজার টাকা দাবি করেন সুজাতার স্বামী। কিছুদিন পর তিনি ওই বাসা থেকে চলে গেলেও মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসতেন।
মুফতি মাহমুদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জীব র্যাবকে জানিয়েছে, সঞ্জীবের বাড়িও ময়মনসিংয়ে। কিন্তু বিয়ের সূত্রে তিনি শরীয়তপুরে থাকেন। সুজাতাদের বাসায় থাকার সময় কিছু বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর থেকেই তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন। সব শেষ গত একমাস ধরে তিনি সুজাতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
‘দুই বন্ধুকে ঢাকায় নিয়ে আসেন’
মুফতি মাহমুদ জানান, গত সোমবার সঞ্জীব তাঁর দুই বন্ধু প্রবীণ সাংমা ও শুভ চিসিম ওরফে শান্তকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় অবস্থানরত তাঁর বন্ধু রাজু সাংমা ওরফে রাসেলের বাসায় থাকতে চাইলে রাজু উত্তরায় এক বাসায় তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সেখানে বসেই তাঁরা সুজাতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ওই অনুযায়ী, রাজুর কাছ থেকে একটি ধারালো অস্ত্র নিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সঞ্জীব একবার কালাচাঁদপুরের ওই বাসায় যান। সেখানে গিয়ে লোকজন দেখে ফিরে আসেন। বিকেলে আবার গিয়ে খালা সুজাতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। এ সময় সুজাতার বড় মেয়ে মায়াবী বাসায় ছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর মায়াবী কাজে চলে যান।
এরপর সঞ্জীব ও তাঁর বন্ধুরা বাইরে থেকে দেশি মদ এনে নিজেরা পান করেন ও খালা সুজাতাকেও পান করান। সুজাতা মদ খাওয়ার পর অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে থাকেন। ওই অবস্থায় একজন বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে আর সঞ্জীব ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিকবার আঘাত করে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
এ সময় পাশের রুমে থাকা সুজাতার মা বেসেথ ওই রুমে এলে তাঁকে হত্যা করে খাটের নিচে ওই চারজন পালিয়ে যান। সেখান থেকে বের হয়ে তাঁরা প্রথমে উত্তরায় যান। সেখানে বাস কাউন্টারের পেছনে ছুরিটি ফেলে বাসে চড়ে শেরপুর চলে যান। শেরপুর থেকেই র্যাব ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
মুফতি মাহমুদ জানান, ওই চারজনের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।