ওভারব্রিজ যেন মরণ ফাঁদ, নওগাঁয় ছাদ থেকে পড়ে ৫ জনের মৃত্যু, রেল পুলিশের তদারকি অকার্যকর বিপজ্জনক জেনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশ ও রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীদের বাধার পরও অনেকেই ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করছে। একটানা ২ রাত ছুটির সময় এই ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ বেড়ে যায়। রেল লাইনের উপর ওভার ব্রিজ, বৈদ্যুতিক তার ও গাছের ডাল থাকায়, ছাদে উঠা যাত্রীরা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিহত ও আহত হচ্ছে। সম্প্রতি নওগাঁ রানীনগরে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও কয়েকজন। তবে রেল পুলিশের দাবি, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে রেল পুলিশ কাজ করছে।

রেল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে কমলাপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। যাত্রীরা স্টেশনের বাইরে গিয়ে সিগনালের কাছে বা যেখানে আস্তে আস্তে ট্রেন চলাচল করে সেখানে ছাদে উঠার চেষ্টা করে। আর ২ থেকে ৩ দিন টানা ছুটি হলে টিকিট না পেয়ে অনেকেই ছাদে উঠে।

সূত্র মতে, টানা ছুটির সময় বহু যাত্রী বা লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা টিকিট না পেয়ে বা লম্বা লাইনের কারণে টিকিট সংগ্রহ করতে না পেরে দলবেধে ছাদে উঠে। ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠার পর যেখানে রেল লাইনের উপর ওভারব্রিজ আছে সেখানে কাটা পড়ে বা আটকা পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। সূত্র জানায়, ট্রেনে কাটা পড়া ঠেকাতে কমলাপুর, তেজগাঁও, টঙ্গীসহ বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন থামলে ছাদে থাকা লোকজনকে নামিয়ে আনা হয়। অনেক সময় তাদের জরিমানা করা হয়। এরপরও কিছুদূর গেলে আবার অনেকেই ছাদে উঠে।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, নওগাঁর রানীনগর রেল লাইনের উপর একটি ওভারব্রিজ রয়েছে। ব্রিজটি খুব নিচু হওয়ায় ৪ জনের মাথায় আঘাত লেগে তারা পড়ে যায়। এরপরই তাদের মৃত্যু হয়। সূত্র জানায়, সারাদেশে ২ হাজার ৮শ কিলোমিটার রেল পথ রয়েছে। একজন যাত্রী বলেন, লোকাল ট্রেনে বগি লাগানো হয় কম। সেখানে যাত্রী বেশি থাকলে ভেতরে প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ছাদে উঠে। ছাদে ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞান ও মলম পার্টির একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। অপরাধীরা সাধারণ যাত্রীদের ব্যাগসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে নেয়ার চেষ্টা করলে ছাদে মারপিটের ঘটনা ঘটে। ওই সময় কেউ কেউ ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়। তাছাড়া লোকাল ট্রেনের টিকিট নিয়ে বিড়ম্বনার কারণে অনেকেই টিকিট না করে ছাদে উঠে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর রানীনগরে রেলওয়ে স্টেশনের ওভারব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্রেনের ছাদে থাকা ৪ যাত্রীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে। নওগাঁ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ও রানীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া বিনতে তাবিব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা মাপ দিয়ে দেখেছেন, রেললাইন থেকে ওভারব্রিজের উচ্চতা ১৫ ফিট ৩ ইঞ্চি এবং ট্রেনের উচ্চতা ১৩ ফিট ৬ ইঞ্চি। যার ফলে ট্রেনের ছাদে যাত্রীরা যখন বাধ্য হয়ে ভ্রমণ করে তখন ওভারব্রিজের রেলিং-এর সঙ্গে ধাক্কা লেগে মর্মান্তিক এই ঘটনাগুলো প্রায়ই ঘটে। তারা অবিলম্বে ওভারব্রিজের উচ্চতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) শওকত জামিল জানান, আমরা ওই ওভারব্রিজের উচ্চতা বাড়াবো। দিনাজপুর, সৈয়দপুর, চিলাহাটী, পার্বতীপুর, নিলফামারী, সান্তাহারসহ উত্তর জনপদের বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঈশ্বরদী, যশোর, খুলনা, যমুনা সেতু পাড় হয়ে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত দিন রাতে আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনসহ প্রায় ১১টি ট্রেন নিয়মিত রানীনগর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে চলাচল করে।

বগুড়া জেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশনে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা বাংলাদেশ রেলওয়ে আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। বিট্রিশ আমলে নির্মিত রেলগুলো সময়ের প্রয়োজনে নতুন করে নির্মাণ কিংবা সংস্কার করায় পাটাতনের উচ্চতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে উড়াল সেতুর রেলিং-এর সঙ্গে অসাবধানতাবসত ছাদে ভ্রমণ করা যাত্রীদের দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।
এ ব্যাপারে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. শওকত জামিল জানান, সেতুটি সংস্কারের জন্য কমিটির সুপারিশ মোতাবেক রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে সেতুটির সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ সম্পর্কে রেল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনের ছাদে উঠা বিপদজনক। কমলাপুরে যাত্রীদের উঠতে দেয়া হয় না। কমলাপুরের বাইরে অন্যান্য স্টেশনে গেলে বেশি যাত্রী হলে ট্রেনে উঠে। এরপরও রেল পুলিশ ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে তৎপর রয়েছে।