একাত্তরের কালরাতের স্মরণে গণহত্যা দিবসের রাতে আগামী ২৫ মার্চ সারা দেশ এক মিনিট ‘ব্ল্যাক-আউট’ কর্মসূচি পালন করা হবে। গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক এক সমন্বয় সভার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের এ কথা জানান।তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত জরুরি স্থাপনা ছাড়া সব জায়গায় এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কেউ কেন্দ্রীয়ভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে দেবে না। নিজ নিজ উদ্যোগে বাতি নিভিয়ে এক মিনিট এই প্রতীকী কর্মসূচিতে যোগ দিতে হবে।বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।অবশ্য তার আগেই ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা বলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।কার্যত সেটাই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, যার পথ ধরে কালরাতের পর শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ পর্ব।
নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।জাতীয় সংসদের স্বীকৃতির পর একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।গত বছরের ২০ মার্চ মন্ত্রিসভা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য ২৫ মার্চকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে গণহত্যা দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়।এরপর সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২৫ মার্চ এক মিনিট সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখাসহ দিবস পালনে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে। রোববারের সমন্বয় সভায় গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা থেকে সাভার স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত রাস্তায় কোনো তোরণ তৈরি করা যাবে না। তবে রাস্তার পাশে স্বাধীনতা দিবসের ফেস্টুন রাখা যাবে।কারাগার, হাসপাতাল ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হবে। কূটনীতিক পাড়া ও সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। সারাদেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হবে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে।আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, ঢাকার পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।