রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানির ওপর এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি অভিযোগ করেছে, এসব সিএনজি অটোরিকশার ৯৬ শতাংশই চলে চুক্তিতে, বকশিস দাবি করে ৯১ শতাংশ, পছন্দের গন্তব্যে যায় না ৮৭ শতাংশ, আর মিটারবিহীন চলে ৪৮ শতাংশ।
রোববার (১১ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ অভিযোগ করা হয়। প্রতিবেদনে ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে সাত দফা সুপারিশও করা হয়।‘ইকোনমিক লাইফ শেষে কেমন চলছে অটোরিকশা?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির সদস্যরা গত ১ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত রাজধানীর ১১টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ২৩০টি অটোরিকশায় যাত্রী সেবার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে ৪২২ যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে একটি চিত্র তুলে আনেন।এতে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীতে অটোরিকশার ৯৬ শতাংশই চুক্তিতে চলাচল করে। মিটারে চলাচলকারী অটোরিকশাগুলোর ৯১ শতাংশই ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া বা বকশিস দাবি করে। যাত্রীদের চাহিদার গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৮৭ শতাংশ অটোরিকশা। এছাড়া পর্যবেক্ষণকালে ৪৮ শতাংশ প্রাইভেট অটোরিকশাকে ভাড়ায় যাত্রী বহন এবং ঢাকা জেলার অটোরিকশাকে বেআইনিভাবে ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রবেশ করে মিটারবিহীনভাবে চলতে দেখা গেছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এতে অভিযোগ করা হয়, পর্যবেক্ষণকালে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় এসব অনিয়ম প্রতিরোধে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার তৎপরতা চোখে পড়েনি। পর্যবেক্ষণকালে যাত্রীরা বলেন, রাত ৯টার পর এবং সকাল ৮টার আগে কোনো অটোরিকশা মিটারে চলছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া বা অটোরিকশা চালকের পছন্দের গন্তব্যের সঙ্গে মিললেই কেবল যাত্রীর ডাকে সাড়া দিতে রাজি হয়। চুক্তিতে চলাচলকারী অটোরিকশায় মিটারের ভাড়া থেকে সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ সর্বোচ্চ ৭১০.৮১ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীকল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় এই বাহনের সংখ্যা কম। ফলে চালকদের ইচ্ছের কাছে যাত্রীরা বছরের পর বছর ধরে জিম্মি হয়ে আছে। অটোরিকশা সংকটের কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি ভাড়া দিয়েও গোপনে চুক্তিতে যাতায়াত করছে যাত্রীসাধারণ। সিটি কর্পোরেশনের টোলের নামে নেওয়া চাঁদা, ফ্লাইওভারের টোল ও যানজটের জরিমানা ওয়েটিং বিলের নামে পুরোটাই যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে।
এই সংকট নিরসনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সাতটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো-১. ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার নতুন অটোরিকশা নামানোর উদ্যোগ নেওয়া; ২. গণমালিকানার পরিবর্তে কোম্পানিভিত্তিক অথবা অ্যাপসভিত্তিক অটোরিকশা পরিচালনার ব্যবস্থা করা; ৩. মিটারবিহীন ও প্রাইভেট অটোরিকশা চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া; ৪. জমা ও ভাড়া বৃদ্ধি, সিলিং নির্ধারণ, মনিটরিং কমিটিতে যাত্রীসাধারণের প্রতিনিধিত্ব রাখা; ৫. নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলাচলকারী অটোরিকশা এক বছর আটকে রাখার বিধান করা; ৬. আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মুনাফা সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া এবং ৭. নতুন অটোরিকশা নিবন্ধনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা।