তথ্য গোপন করে চাকুরি নিয়েছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীতে (ডিপিডিসি) সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ৭ জন কর্মকর্তা। জুনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) পদে ২০০১ সালে সাবেক ডেসাতে নিয়োগ পাওয়া এই কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩ জন তথ্য গোপন করে চাকুরি নিয়েছেন। আর বাকী চারজন চাকুরিরত অবস্থায় তথ্য গোপন করেছেন। পরবর্তীতে তারা মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ডিপিডিসিতে নিয়োগ পান।

তথ্য গোপনের অপরাধে অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। তবে এসব অপরাধ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের আওতাভূক্ত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট পাঠানো হয়। কিন্তু অদ্যাবদি দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি ডিপিডিসি। বরং একেক কর্মকর্তা দুই দফা/তিন দফা পদোন্নতি ভাগিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ডিভিশনে সহকারী প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তা হলেন- মোহাম্মদ মাজেদুর রহমান, মোহাম্মদ শাহানুর রশিদ, মো. ওহিদুল হক, এস.এম.এ.কে আজাদ, মোহাম্মদ সাইদ হোসেন, মো. বেলায়েত হোসেন এবং মো. সাইয়েদ মাহমুদ। তবে অভিযুক্তদের মধ্যে দুইজন মোহাম্মদ সাইদ হোসেন ও মো. সাইয়েদ মাহমুদ বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দুদক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সুপারিশ করেছেন এ বিষয়টি সত্য। তবে দুদকের এই সুপারিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো কথা বলতে রাজী হননি তারা।

এবিষয়ে ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান দেশের বাইরে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করার সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা পরিচালক (প্রশাসন) জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হয়েছিল। জাকির হোসেনকে মুঠো ফোনে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ডিপিডিসি’র বিভিন্ন ডিভিশনে সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত থাকা এই ৭ কর্মকর্তার মধ্যে মোহাম্মদ শাহানুর রশিদ ১৯৯৭-৯৮ সেশনের পরীক্ষার্থী হিসেবে ১৯৯৮ সালে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে øাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। অথচ ২০০১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর চাকুরিতে যোগদানের সময় তিনি সেই তথ্য গোপন করেন। মোহাম্মদ মাজেদুর রহমান øাতক ডিগ্রী অর্জন করেন ২০০২ সালে। চাকুরিরত অবস্থায় বিনা অনুমতিতে অধ্যায়ন ও ডিগ্রী অর্জন করেছেন তিনি। মোহাম্মদ সাইদ হোসেন, মো. ওহিদুল হকও ২০০২ সালে চাকুরিরত অবস্থায় বিনা অনুমতিতে অধ্যায়ন ও ডিগ্রী অর্জন করেছেন। আর এসএমএকে আজাদ ২২০৩ সালে চাকুরিরত অবস্থায় বিনা অনুমতিতে অধ্যায়ন ও ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এছাড়া মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চাকরিতে প্রবেশের আগে ১৯৯৫ সালে মো. সাইয়েদ মাহমুদ ১৯৯৮ সালে øাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।

অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নেমে দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় নামে। সংস্থাটি কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ ও ডিপিডিসি’র বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রণীত নিয়োগ সংক্রান্ত বিধিমালা দেখতে চায়। সেইসাথে এসব কর্মকর্তার নিয়োগ/পদোন্নতিকালীন দাখিলকৃত আবেদন ফরম ও সব একাডেমিক সনদ, পদোন্নতির আগে ডিপিডিসি’র বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীও পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা পায়। দুদকের পরিচালকের কাছে (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত) দেয়া প্রতিবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সামিউল মাসুদ বলেন, ‘অভিযুক্ত তিন প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহানুর রশিদ, মো. বেলায়েত হোসেন ও মো. সাইয়েদ মাহমুদ চাকরিতে যোগদানের পূর্বে আবেদনপত্রে øাতক প্রকৌশল ডিগ্রী অর্জনের বিষয়টি উল্লেখ না করে তথ্য গোপনের অপরাধে অপরাধী। বাকী ৪ জন প্রকৌশলী মো. মাজেদুর রহমান, মোহাম্মদ সাইদ হোসেন, মো. ওহিদুল হক ও এএমএকে আজাদ ছাত্রত্বের তথ্য গোপন ও চাকরিতে যোগদানের পর চাকরির সমান্তরালে ঢাকা হতে গাজীপুরে নিয়মিত ক্লাস, সেশনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রেখে সরকারি অনুমোদন গ্রহণ না করে কর্মস্থলে নিয়মিত অনুপস্থিত থেকে সরকারি সেবা প্রদান করেছেন, চাকুরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং একইসাথে রাষ্ট্র হতে গৃহীত বেতন-ভাতা, বোনাসসহ অন্যান্য সকল আর্থিক সুবিধাদি গ্রহণ করে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন। ফলে এতে রাষ্ট্রায়ত্ব পূর্ণ সরকারি কোম্পানী হিসেবে তৎকালীন ডেসা (বর্তমানে ডিপিডিসি) বিদ্যমান চাকুরিবিধি লঙ্ঘন, অসদাচারণ হয়েছে মর্মে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’ তার এই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এই সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুদদকে অবহিত করার অনুরোধ করেন। কিন্তু দুদকের সেই সুপারিশ অদ্যাবদি বাস্তবায়িত হয়নি।