খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্বিত করে করে তাকে সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। এ দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে নানা রকম ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তাই মিথ্যা মামলা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আমাদের আন্দোলন শুধু খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য নয়, আওয়ামী লীগের মত একটি স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে এ আন্দোলন শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিএনপির মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সমগ্র দেশের মানুষের কাছে, সব রাজনৈতিক দলের কাছে আহ্বান জানিয়েছি যে, আপনারা আসুন ঐক্যবদ্ধ হোন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করুন।তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা একটা মামলায় কারসাজি করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। তার আইনি যে অধিকার সংবিধানসম্মত, সেই আইনি অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাকে জামিন পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। সেজন্য কলাকৌশল করে, কারসাজি করে, ছল-চাতুরি করে, তার মুক্তিকে বিলম্বিত করা হচ্ছে।এই দেশকে মুক্ত করবার জন্য, গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার জন্য আমরা সকলে ঐক্যদ্ধ হয়ে আন্দোলন করি।

সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তোপখানা মোড় থেকে হাই কোর্টের কদম ফোয়ারা পর্যন্ত এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক এই অংশ নেয়।অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে ফখররু বলেন, বাংলাদেশকে ‘জঙ্গি’ রাষ্ট্র বানানোর চক্রান্ত হচ্ছে।ফখরুল বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্র লক্ষ্য করেছেন। সেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে এই দেশকে একটি সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর রাষ্ট্র, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবার চক্রান্ত। সেই চক্রান্তের ফলেই দেখা গেল এদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় লেখক, বিজ্ঞানী এবং প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত করা হল প্রকাশ্যে। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত শনিবার বিকালে এক অনুষ্ঠানে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর ছুরি নিয়ে হামলা করে এক তরুণ।এ ঘটনার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো রকম তদন্ত না করেই বলে দেওয়া হলো যে, বিএনপি এটার জন্য দায়ী। অথচ দেখা গেল যাদের ধরা হচ্ছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। আজকে স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্ন এসে যাবে যে, তাহলে কী আওয়ামী লীগ একদলীয়ভাবে টিকে থাকবার যে হীন উদ্দেশ্য, সেই উদ্দেশ্যে এই দেশকে একটা অকার্য্কর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, একটা জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এই হীন চক্রান্ত হচ্ছে।মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার দেশনেত্রীর কারাবাসকে দীর্ঘায়িত করতে চায়, যাতে করে আগামী একাদশ নির্বাচনে দেশনেত্রী ও বিএনপিকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচন করতে পারে।আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, দেশনেত্রী ও ২০ দল ছাড়া দেশে কোনোভাবেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। দেশনেত্রীকে বাইরে রেখে যারা নির্বাচন করতে চান তারা দুঃস্বপ্নে আছে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারকে বলতে চাই, যত বিলম্ব করার চেষ্টা করুন না কেন, যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন, যত ছলচাতুরি করুন না কেন, ইনশাল্লাহ বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসবেনই। সেটা আর বেশি দূরে নয়, আদালতের মাধ্যমেই তা হবে।প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় মানববন্ধনে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, জিয়াউর রহমান খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ ও ছাত্র দলের আসাদুজ্জামান আসাদ বক্তব্য দেন।এছাড়া ২০ দলীয় জোটের কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির একাংশের মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।