মিয়ানমার সেনাবাহিনী তমব্রু সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুল হক। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। বিজিবি জানায়, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মাইকিং করে সরে যেতে বলছে। এতে করে সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনা জানার পর বিজিবির পক্ষ থেকেও সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।মুজিবুল হক আরো জানান, মিয়ানমারের তমব্র“ সীমান্তে ৩৪ ও ৩৫ পিলারের মাঝামাঝি এলাকায় আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠ্ৎা করেই অতিরিক্তি সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার। মোতায়েন করে ভারী অস্ত্র। যা বিজিবির কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। এর পরপরই বিজিবিও সতর্ক অবস্থান নেয়। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদলিপি ও পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়া হলেও ওপার থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক আছে জানিয়ে মুজিবুল হক আশা প্রকাশ করেন, পতাকা বৈঠকের মধ্য দিয়েই এর সমাধান হবে।

সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ’কে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) বিকালে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব এম খোরশেদ আলম তাকে তলব করেন। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক পত্র (নোট ভারবাল) তাকে দেওয়া হয়েছে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় এবং বলা হয়, এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ভালো নয়।

সূত্র জানায়, তাকে একটি নোট ভারবাল বা আনুষ্ঠানিক পত্র দেওয়া হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখা হচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে।গত ফেব্র“য়ারি মাসে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে আলোচনা হয় এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য আহবান জানানো হয়।অন্য একটি সূত্র জানায়, রাখাইনে সামরিক শক্তি বাড়ালে নো-ম্যানস ল্যান্ডে যে ছয় হাজার রোহিঙ্গা আছে তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে আগ্রহী হবে না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন অঙ্গরাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনী অব্যাহত নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো শুরু করলে দেশটি থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিলেও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আহ্বানসহ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার।