রাজবাড়ীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে নামিয়ে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে তিন অটোরিকশাচালককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদেরকে রোববার কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। এ ঘটনায় ওই তরুণী বাদী হয়ে রোববার সকালে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃত হলো, রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের মৃত আবুল মোল্লার ছেলে রানা মোল্লা (২৪), একই গ্রামের মৃত মুন্নাফ সরদারের ছেলে হান্নান সরদার (২৬) ও খানখানাপুর ইউনিয়নের দত্তপাড়া গ্রামের আরশাদ মোল্লার ছেলে মামুন মোল্লা (২০)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নির্যাতিতা তরুণী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। গত শুক্রবার তিনি ঢাকা থেকে তার বাড়ি গোপালগঞ্জের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। ওই তরুণী ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে যাচ্ছিলেন। পাটুরিয়া ঘাটে দীর্ঘ যানজট থাকায় তিনি বাস থেকে নেমে লঞ্চে পদ্মা পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসেন। সেখান থেকে ফরিদপুর বা মাদারীপুরের সরাসরি কোনো বাস না পেয়ে একটি মাহেন্দ্র পরিবহনে গোয়ালন্দ মোড়ে যান। সেখানে ফরিদপুরের কোনো বাস পাওয়া যাবে না বলে জানায় উপস্থিত কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক। অটোরিকশায় শিবরামপুর গেলে ফরিদপুরের বাস পাওয়ার কথা জানায় তারা। এ সময় ওই তরুণী চালকের কথায় বিশ্বাস করে অটোরিকশায় ওঠেন। ওই অটোরিকশায় আগে থেকেই ছিলেন রানার দুই সহযোগী মামুন ও হান্নান। বসন্তপুর এলাকায় নির্জন স্থানে যাওয়ার পর অটোরিকশা থেকে নামিয়ে তরুণীর মুখ চেপে ধরে পাশের একটি ঝোপে নিয়ে ধর্ষণ করে রানাসহ তিনজন। পরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আরও তিন-চারজনকে ডেকে আনা হয়। তারাও ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে তরুণীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পালিয়ে যান। ওই তরুণী স্থানীয় এক বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরদিন শনিবার সকালে তিনি ফরিদপুরে র্যাবকে বিষয়টি জানান।
র্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানির অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রইছ উদ্দিন বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজবাড়ি জেলার রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর বাজার এলাকা এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগে তিন জনকে আটক করে র্যাব। পরে তাদের সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। তিনজনই ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের সাথে আরো ৩/৪ বখাটে ওই নারীকে ধর্ষণ করেছিল বলেও তারা স্বীকার করেছে। তারা বিভিন্ন সময় চুরি, ছিনতাইও করে।
রাজবাড়ী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ওই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দুপুরে রাজবাড়ী আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ঘটনার পর বসন্তপুর ইউনিয়নে পুলিশী নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুশীল কুমার রায় বলেন, তরুণীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের ঘটনা সত্য। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে রাজবাড়ী জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সবিতা চন্দ্র গুহ ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তিনি।
বসন্তপুর ইউনিয়নে সম্প্রতি অপরাধ প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য লিটনের মেহগনি বাগান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় (২৫)এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই স্থানে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।