সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৭তম। গত বছর ১৫তম সূচকে থাকা বাংলাদেশ এবার ২ ধাপ উন্নতি করেছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে তুলনামূলক দুর্নীতি কমেছে। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বৃহস্পতিবার দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করে, সেখানে বাংলাদেশের এই অবস্থান পাওয়া যাচ্ছে।গত বছর এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫তম। তার আগের বছর ছিল ১৩তম। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বার্লিন থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অ লের ২০১৭ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টিআই বৃহস্পতিবার এই সূচক প্রকাশ করেছে।সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৩ নম্বরে। গতবার ১৭৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫ নম্বরে।

আবার অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বিবেচনা করলে বাংলাদেশ আগের ১৫তম অবস্থান থেকে এবার ১৭তম অবস্থানে উঠে এসেছে।১০০ ভিত্তিতে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এবার ২ পয়েন্ট বেড়ে ২৮ হয়েছে। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখালূজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে এবারের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের দুর্নীতির পরস্থিতি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ধারণাসূচকে বাংলাদেশ হয়ত দুই ধাপ এগিয়েছে, কিন্তু এটা মোটা দাগে আশার স ার করে না। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল আফগানিস্তানের থেকে আমরা এগিয়ে আছি। আর এশিয়া-প্যাসিফিক অ লেও নিচের দিক থেকে আমাদের অবস্থান চতুর্থ।অন্যদিকে আমাদের এগিয়ে যাওয়া কিছুটা উর্ধ্বগামী হলেও সেটা স্থায়িত্বশীল ও ধ্যূত নয়।টিআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তালিকায় এবারও সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া; তাদের স্কোর গতবারের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে হয়েছে ৯।

এরপরে রয়েছে যথাক্রমে সাউথ সুদান, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সুদান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, গিনি-বিসাউ, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ভেনেজুয়েলা ও ইরাক।অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৮৯ স্কোর নিয়ে তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে নিউ জিল্যান্ড। এর পরে রয়েছে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, কানাডা, লুক্সেমবুর্গ, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য।দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবারের সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। ৬৭ স্কোর নিয়ে ভুটানের অবস্থান সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ২৬ নম্বরে। এরপর ভারত ৮১ (স্কোর ৪০), শ্রীলঙ্কা ৯১ (স্কোর ৩৮), মালদ্বীপ ১১২ (স্কোর ৩৩), পাকিস্তান ১১৭ (৩২), নেপাল ১২২ (স্কোর ৩১) এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান ১৭৭তম (স্কোর ১৫) অবস্থানে রয়েছে।২৮ স্কোরে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানের রয়েছে- গুয়াতেমালা, কেনিয়া, লেবানন ও মৌরিতানিয়া।

আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতি কাঠামোতে তুলনামূলকভাবে সুদৃঢ় অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এবার সূচকে সামান্য এগিয়েছে মন্তব্য করে ইফতেখালূজ্জামান বলেন, ই-প্রকিউরমেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশনও এক্ষেত্রে ফল দিয়েছে।কিন্তু সেই নীতি প্রয়োগে ঘাটতি, ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে ক্রমবর্ধমান অনৈতিক প্রভাব বিস্তার, অনিয়ম ও দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলায় জড়িত ও সহায়তাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে তথা জবাবদিহিতা নিশ্চিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য না পাওয়ায় আমরা আরও ভালো করতে পারিনি।

নির্বাচনী বছরে সূচকের এই অগ্রগতি কোনো প্রভাব ফেলবে কি-না, এমন প্রশ্নে ইফতেখালূজ্জামান বলেন, প্রভাব ফেলার বিষয় আমরা মাথায় রাখি না। নির্বাচনে এর সুফল আসে কি-না সেটার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমরা এই অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট না। বিব্রতকরভাবে কেবল আফগানিস্তানের থেকে এগিয়ে।

দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজার রায় সূচকের অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছে কি-না এমন প্রশ্নে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই সূচকটি ওই মামলার রায় হওয়ার আগেই হয়েছে, ২০১৭ সালের তথ্য নিয়ে। এটার প্রভাব পড়ে কি-না সেটা পরেরবার দেখা যাবে।তবে এখন আমরা যদি বলি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের আওতায় আনার মাধ্যমে বাংলাদেশে আইনের চোখে সবাই সমান হয়ে গেছে- তা কিন্তু নয়। এর ধারাবাহিকতা যদি না রাখতে পারি অন্য সবক্ষেত্রে, তাহলে দুর্নীতি ও এর বিচার নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকেই যাবে।টিআইবির করা বিভিন্ন জরিপ ও ফলাফল দুর্নীতির এই ধারণা সূচক প্রণয়নে কোনো ভূমিকা রাখে না দাবি করে টিআইবি নির্বাহী বলেন, বিশ্বব্যাপী মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠানের জরিপ ও গবেষণার উপর ভিত্তি করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এই সূচক প্রণয়ন করে।তিনি জানান, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আটটি জরিপের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে’, ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ‘কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের ‘রুল অব ল’ ইনডেক্স’, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভের ‘ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড’, বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশনের ‘ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স’ এবং বিশ্ব ব্যাংকের ‘কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্টের’ তথ্য এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।