বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনবিচ্ছিন্ন, অনৈতিক সরকার রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য মিথ্যা মামলা-নথি তৈরি করে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে। এ রায় দেশের জনগণ কোনো দিন গ্রহণ করবে না। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের দায়ে বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদন্ডের রায় ঘোষণার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা অত্যন্ত ঘৃণার সঙ্গে এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি।রায়ের প্রতিবাদে কাল শুক্রবার নামাজের পর সারা দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল। দলের প্রতি খালেদা জিয়ার নির্দেশনার কথা উলেখ করে তিনি বলেন, কোনো ধরনের সহিংস এবং হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে ধৈর্য ধরতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, শুধু রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়াকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ও আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে তাঁকে দূরে রাখার জন্য এই রায়। একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করার জন্য যে নীলনকশা, তা বাস্তবায়নের জন্যই এই সাজার রায় দেওয়া হয়েছে।মির্জা ফখরুল বলেন, এই রায় বর্তমান রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে; বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা চলে যাবে। তিনি বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে গত তিন দিন ধরে এই সরকার দেশে যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে রেখেছে। সরকার দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করেছে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করেছে।
গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, আজ খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে নেতা-কর্মীরা আসছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপির ওপর চড়াও হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আজ ঢাকা শহরের মোড়ে মোড়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পাহারা বসিয়েছে, তারাই পুলিশের সহায়তায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের ওপর হামলা চালিয়েছে।মির্জা ফখরুল দাবি করেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান দুদু, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির শাহাদত হোসেনসহ সারা দেশে এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট সাড়ে তিন হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।তিনি বলেন, দেশনেত্রী খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্দেশ দিয়ে বলেছেন কোনো রকমের কোনো হঠকারী কর্মসূচি দেয়া যাবে না, কোনো রকমের সহিংস কোনো কর্মসূচি দেয়া যাবে না। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে হবে, বিক্ষোভ করতে হবে। এই কথাটা বরাবরই বলেছেন তিনি। সেজন্য দেশনেত্রীর নির্দেশে শুক্রবার জুমার নামাজের পর সারাদেশে জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও নিয়মাতান্ত্রিক কর্মসূচি হবে। পরদিন শনিবারও সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাব, দেশনেত্রীর শেষ কথা ধৈর্য্য ধরতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। সেই ত্যাগ স্বীকার করে জনগণের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিতে হবে।এ ব্যাপারে সরকারকে ‘কোনো প্রকার উস্কানি’ না দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।বিএনপি মহাসচিব বলেন, বুধবার গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে আমরা স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দেশনেত্রীর সাথে কথা বলি। তার কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম যদি রায় আপনার বিপক্ষে যায় তাহলে আমাদের পক্ষে কী ধরনের কর্মসূচি আমরা দেব। তিনি খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কোনো রকমের হঠকারী কর্মসূচি দেওয়া যাবে না।
বৃহস্পতিবার পুরান বকশীবাজারে আদালতে খালেদার উপস্থিতিতে ঢাকার প ম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করেন।মামলার ছয় আসামির মধ্যে খালেদার বড় ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের হয়েছে দশ বছর করে কারাদ-।সেই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার করে জরিমানা করেছেন বিচারক।রায় ঘোষণার পর খালেদাকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই রায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসা পূরণের রায়। এই রায় একদলীয় শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য দেওয়া হয়েছে।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির এ কথা বলেন। তিনি এই রায়কে ধিক্কার ও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।রিজভী অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে ভয়ংকরভাবে পর্যুদস্ত করতে এই সরকার এবং এই সরকারের মুরব্বিরা পরিকল্পনা করে আসছেন। কেননা খালেদা থাকলে সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র থাকবে। তিনি বলেন, একজন ব্যক্তিকে খুশি করতে এ রায় দেওয়া হয়েছে।রিজভী দলের নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করুন, নিজেরা বুলেট বরণ করুন কিন্তু শান্তি বজায় রেখে রাস্তায় নামুন।