ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বনশ্রী ডিভিশনে সার্ভারে গ্রাহকের বিলের তথ্য নয় ছয় করে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই সদস্যের টিম মাঠে নেমেছে। এ ঘটনার অনুসন্ধানে গত রোববার ডিপিডিসির বনশ্রী ডিভিশনে চারজন পুলিশসহ অভিযোগে তদন্ত কর্মকর্তা কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন এবং উপ-সহকারী পরিচালক সোমা হোড় তদন্ত করেন। দুদকের অপর এক সূত্র জানায়, এঘটনার সাথে জড়িত রাঘব বোয়ালরা রয়েছে ধোরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে এসব রাঘব বোয়ালরা দুদকের হাত থেকে রেহাই পাবেনা বলে জানান কমিশনের টাস্কফোর্স। এ অভিযোগের বিষয়ে ডিপিডিসির বনশ্রী ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহসিন আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদকের তদন্ত টিম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতার কথা স্বীকার করেছে তিনি। কমিশনের তদন্ত সূত্র বলছে, কম্পিউটারে বিলের রিডিং ডিলেট করে মোটা অংকের অর্থ লুটপাট করেছে ডিপিডিসির একটি অসধু চক্র। ডিপিডিসির তদন্ত কমিটির প্রধান প্রকৌশলী সারোয়ারে কায়নাত নূর জানান, প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ ৫০ হাজার রিডিং এর গড়মিল পাওয়া গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা । এই চক্র ২০০৮ সাল থেকে এমন অপরাধ করে আসছে বলে ডিপিডিসির তদন্ত সূত্র জানায়। অভিযোগের বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান সোমবার বলেন, দু’জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তারা হলেন, ডিপিডিসি বনশ্রী শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা এবং ওই প্রতিষ্ঠানের ডাটা-এন্ট্রি অপারেটর মীর কামাল হোসেন। বনশ্রী ডিভিশন থেকে জানা যায়, মুন্সি ইঞ্জিনিয়ার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে দুই বছরের কন্ট্রাকে নিয়োগ পাওয়া দুই মিটার রিডার এই চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এ ঘটনার তদন্তে বিভাগীয় দুটি কমিটি কাজ করছে। দুই একদিনের মধ্যেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, মীর কামাল হোসেন লাইনম্যান হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে সার্ভারের পাসওয়ার্ড থাকে উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কাছে।গ্রাহকের বিল সংশোধনসহ অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে সার্ভার ব্যবহারে এই পাসওয়ার্ড ব্যবহৃত হয়।সোহেল রানার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কামাল নানা অপকর্ম করতেন বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। পাসওয়ার্ড হস্তান্তরযোগ্য না হলেও সোহেল রানা কেন কামালকে দিয়েছেন এমন প্রশ্নই ঘুর-পাক খাচ্ছে তদন্ত সংস্থার কাছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত কামাল হোসেনের ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। অন্য অভিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানাকে মুঠো ফোনে পাওয়া যায়নি।

এদিকে অপর আরেক সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত চলাকালে কয়েকজন সিবিএ নেতার মাধ্যমে একটি মহল অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।বিদ্যুৎ ভবন সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত কামাল অর্থের বিনিময়ে সোলার প্যানেল ও কাগজপত্র ছাড়াই গ্রাহকের নির্ধারিত লোড বাড়িয়ে দিতেন।এমনকি গ্রাহকের টাকা ব্যাংকেও জমা দিতেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর বাইরে সার্ভারে গ্রাহকের মিটার রিডিংয়ের তথ্য কমিয়ে অর্থ আত্মসাত করতেন ডিপিডিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সম্প্রতি বনশ্রী শাখায় কয়েকটি মিটারের মাঠ পর্যায়ের তথ্য ও সার্ভারের তথ্যের মধ্যে গরমিল দেখা দিলে মিটারগুলো পরীক্ষা করে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। ডিপিডিসির বনশ্রী শাখার আরেক দুর্নীতিবাজ সহকারী প্রকৌশলী শাহনূরের বিরুদ্ধে সরকারী টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে দুদক কমিশনে। অভিযোগটি ছিল ২০১৬ সালের শেষের দিকে। এঘটনায় ২০১৭ সালে তাকে দুদক স্বশরীরে হাজির হতে নোটিশ দেয় কমিশন। চলমান অভিযোগেরও মূল হোতা শাহনূর। তাঁর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আগে পরে কোন অভিযোগ নেই। এমনকি বর্তমান ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।