সরকার নতুন করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায় পূর্ব নির্ধারিত। এই অবৈধ সরকার আগেই রায় লিখে রেখেছে। বিচার হবে প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন, তাই।গত মঙ্গলবার লালমনিরহাট শহরের সদর হাসপাতাল রোডে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আদালতের দেওয়া সাজা মাথায় নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাবেন; আদালতে বিচারাধীন মামলার গতিপ্রকৃতি দেখে সেটাই মনে হচ্ছে। তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। এরশাদের এই বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য ২৪টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মিথ্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর ভাষায়, সপ্তাহে তিন দিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হওয়ার নজিরবিহীন নির্যাতন, তারিখে তারিখে জামিন দেওয়ার নজিরবিহীন আদেশ সমগ্র বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নজিরবিহীন দ্রুততার সঙ্গে মামলা শেষ করার প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে এই সরকার খালেদা জিয়াকে ভয় করে বলেই তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়।সরকারের এসব অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সব মামলা প্রত্যাহার করুন। ক্রসফায়ার, হত্যা, গুম ও খুন বন্ধ করুন। গ্রেপ্তার বন্ধ করুন। তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই ধরনের অবমাননাকর, অমানবিক আচরণ শুধু সামরিক শাসন এবং ফ্যাসিবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়।বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সারা দেশে নতুন করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক হারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন শুরু করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্রসফায়ার ও গুমের ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ বছর নির্বাচনের বছর। সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের জন্য যখন সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ ও সমান্তরাল মাঠ তৈরি করার প্রয়োজন বেড়ে চলেছে, তখন এই ধরনের ক্রসফায়ার, গুম, খুন, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের সব সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, এই অনৈতিক সরকার পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেভোটারবিহীন নির্বাচনে স্বঘোষিত সরকার আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনের পূর্বেই বিরোধী দলকে মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার হীন চক্রান্ত করছে।সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। মামলা রেখে নির্বাচন করা যায় না। গ্রামের কর্মীরাও পর্যন্ত মামলার মধ্যে পড়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পূর্ব শর্ত বলে কিছু নেই। নির্বাচন করতে হলে সমান্তরাল মাঠ তৈরি করতে হবে। পার্লামেন্ট ভেঙে (ডিসলভ) দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে আমাদের মূলকথা।রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে আজ, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই।

সংবাদ সম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।