ডিপিডিসির অন্য কোন ডিভিশনে দূর্নীতি হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান। রাজধানীর বনশ্রী ডিভিশনে জালিয়াতির ঘটনায় বুধবার সকালে পরিদর্শেনে এসে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ডিপিডিসির পরিচালক (অপারেশন) হারুন অর রশিদসহ কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, ডিপিডিসিতে কেউ দুর্নীতি করলে সে যত ক্ষমতবানই হোক না কেন, তার কোন ছাড় নেই । দুর্নীতি বিষয়ে ডিপিডিসির অবস্থান জিরো টলারেন্স।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বনশ্রী ডিভিশনে কোটি টাকা জালিয়াতি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন চলতে থাকা এ জালিয়াতির ঘটনা চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ধরা পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত তিন জানুয়ারি দুই কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায় ডিপিডিসি’র পক্ষ থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।একটি তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলী (সেন্ট্রাল) সারোয়ারে কায়নাতে নূর। অপর কমিটির প্রধান করা হয় ডিপিডিসির আইসিটি বিভাগের প্রধান মো. রবিউল হাসান।
সরকারি বিদ্যুৎ বিলের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় যে দুই জন বনশ্রী ডিভিশন থেকে বরখাস্ত হয়েছেন তাদের একজন মীর কামাল হোসেন। তিনি ডিপিডিসির বনশ্রী ডিভিশনের লাইনম্যান ম্যাট। এই কর্মচারী মূলত লাইনম্যান ম্যাট হলে তিনি দায়িত্ব পালন করেন ডিভিশনের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাইনম্যান ম্যাট থেকে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হওয়ার জন্য ২০১৫ সালে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাস না করতে পারায় তাকে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু উপরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে তিনি ঠিকই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মীর কামাল লাইনম্যান ম্যাটের বেতন পেলেও ‘লাভজনক’ পদ হিসেবে কৌশলে তিনি অপারেটরেরদায়িত্ব পান। এসব বিষয়ে যোগাযোগ করে কথা বলার চেষ্টা করলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এই ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া অপর ব্যক্তি বনশ্রী শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা। তার বরখাস্ত হওয়ার বিষয়টি একটু ভিন্ন। ডিপিডিসির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, একটি ডিভিশনের ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে সার্ভারের পাসওয়ার্ড থাকে উপসহকারী প্রকৌশলী কাছে। দিনের বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকের বিল সংশোধনসহ অন্যান্য খুটিনাটি কাজের ক্ষেত্রে সার্ভারে পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকে কাজ করতে হয়। বনশ্রীর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম ছিল। কিন্তু সোহেল রানাকে দিনের বেশির ভাগ সময় অফিসের বাইরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গ্রাহকদের বিড়ম্বনার শিকার থেকে রক্ষা করতে ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন আবদুল্লাহর নির্দেশে পাসওয়ার্ডটি ডাটা এন্ট্রি অপারেট কামালকে দেওয়া হয়। এই সুযোগে কামাল ওই ডিভিশনের মিটার রিডার ও অন্যান্য কর্মচারীসহ কিছু দালালদের যোগসাজসে সার্ভারে টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাত করার সুযোগ নেন। পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায় বনশ্রী ডিভিশনশনের সকর অনিয়ম সোহেল রানার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে করা হয়েছে বলে ধরা পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিপিডিসি মীর কামাল হোসেনের সঙ্গে সোহেল রানাকেও বরখাস্ত করে।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির পরিচালক (অপারেশন)পরিচালক হারুন অর রশিদ ফোকাস বাংলাকে জানিয়েছেন, ডিপিডিসির ৩৬টি ডিভিশনে গত এক বছরে আড়াই হাজারের মতো মিটার গ্রাহকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তন করা হয়েছে।এ পরিবর্তনে কোন রকম অনিয়ম হয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।তদন্ত কমিটির সূত্রে জানা যায়, বনশ্রী ডিভিশনের জালিয়াতির ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মীর কামাল হোসেন তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়ে জালিয়াতির কথা স্বীকার করে বলেছেন,তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেছেন কয়েকজন লাইনম্যান। তবে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের কোন কর্মকর্তা জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন।
ডিপিডিসির সূত্র জানা যায়, বরখাস্ত হওয়া মীর কামালকে বাচাঁতে সিবিএ এর একটি মহল জোড় তৎপরতা চালাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, এমন একটি প্রযুক্তিগত জালিয়াতি ধরতে তদন্ত কমিটির এতদিন সময় লাগার কোনো কারণ নেই। তারা কোনোভাবে প্রভাবিত হয়ে হয়তো রিপোর্ট দিতে দেরি করছেন।উল্লেখ্য, তদন্ত কমিটি গঠনের সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা। এর মধ্যে প্রায় দ্বিগুন সময় পার হয়ে গেলেও রিপোর্টের দেখা মিলেনি।সারোয়ারে কায়ানাতে নূর ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে একটি তদন্ত কমিটির প্রধান। বুধবার ডিপিডিসির ব্যবস্থপনা পরিচালক বনশ্রী ডিভিশন পরিদর্শকালে সারোয়ার কায়ানাত উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত প্রায় শেষ। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও কয়েকজন লাইম্যান ছাড়া আর কেউ জড়িত নয়। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
বনশ্রী ডিভিশনের নিবার্হী প্রকৌশলী মহসিন আবদুল্লাহ জানান, আমরা ইতিমধ্যে ৩০০ গ্রাহকের অর্থ ফেরত নিয়ে আসছি।