বন্দিদের সংশোধন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কারাগারে চালু হয়েছে গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি এবং জামদানি উৎপাদন কেন্দ্র (রিজিলিয়ান্স)। বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে এ কারখানা উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। উদ্বোধনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলখানায় হস্তশিল্প কারখানা চালু আছে। সব বন্দিকে বিভিন্ন রকম কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রথম নারায়ণগঞ্জ কারাগারে পোশাক কারখানা ও জামদানি উৎপাদন কেন্দ্র চালু হলো। এর ফলে বন্দিরা কাজ করে উপার্জন করতে পারবেন। এখানে কাজ করে বন্দিরা যা উপার্জন করবেন তা তাদের সংশ্লিষ্ট একাউন্টে জমা হবে। এই অর্থ তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠাতে পারবেন অথবা জেলজীবনের শেষে পুরো অর্থ তুলে নিতে পারবেন। এতে বন্দিদের পরিবারেরও উপকার হবে। কাজের অভ্যাস হলে অপরাধ থেকে দূরে থাকতে পারবে যে কেউ। ক্রমান্বয়ে দেশের সব কারাগারে এ ধরনের সুযোগ করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সব কারাবন্দিরা শিগগিরিই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর-প্রতীক, আইজি প্রিজন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া, পুলিশ সুপার মইনুল হক, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ, জেলার আসাদুর রহমান।
জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, এ কারাগারে ১৯০০ বন্দি রয়েছেন। এরমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি আছেন সাড়ে তিনশ’। এখানে চাইলে সবাই কাজ করতে পারবেন। তিনি জানান, কারখানাটি চালানো হবে দু’শিফটে। এ জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ বন্দিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকটারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশনে। তিনি বলেন, এই গার্মেন্ট কারখানাটি ৫০০০ বর্গফুট এলাকায় গড়ে উঠেছে। এতে সহায়তা করেছে জেলা প্রশাসন ও সমাজ কল্যাণ সংক্রান্ত বিভাগ। কারখানার জন্য আমদানি করে স্থাপন করা হয়েছে ৫৭টি মেশিন।
জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া জানান, কারাবন্দিদের উৎপাদিত পণ্য জেলা কারাগারের সামনের বিক্রয় কেন্দ্র বিক্রি করা হবে। এছাড়া আড়ং এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ফলে এখানে উৎপাদিত পণ্য তাদের বিভিন্ন শোরুমে পাওয়া যাবে। বাকি পণ্য বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য নেবে। এ ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ সহায়তা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
সংসদ সদস্য বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, কারাগার কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ব্যবস্থা করলে এবং বিদেশি ক্রেতাদের কারাগারে ঢোকার সুযোগ দিলে এখান থেকে উৎপাদিত পোশাক বিদেশে রপ্তানি করে বছরে ১৫ লাখ ডলার আয় করা সম্ভব। এজন্য বিকেএমইএর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।