নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার নিখোঁজের এক মাস ১৪ দিন পর বাড়ি ফিরেছেন।সিজারের বাবা মোতাহের হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সিজার বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে দক্ষিণ বনশ্রীর বাসায় ফিরেন। তবে কে বা কারা সিজারকে বাড়ি পৌছে দিয়েছে এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেন নি। মোতাহের হোসেন জানিয়েছেন, সাংবাদিক উৎপল দাস যেভাবে ফিরে এসছেন ঠিক একইভাবে সিজার ফিরেছেন।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিজার রাতে বাসায় ফিরেছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। তবে তিনি এতদিন কোথায় ছিলেন এ বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সিজারের বোন তামান্না লিখেছেন আল্লাহতা’লার অশেষ রহমতে গতকাল দিবাগত রাত ১টায় আমার ভাইয়া সুস্থ অবস্থায় বাসায় ফিরেছে! গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বেগম রোকেয়া সরনি থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার।

সিজার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক করার পর যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করেন। একসময় সাংবাদিকতাও করেছেন তিনি। আলোচনা ডটকম নামে একটি সাময়িকীর সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিজার বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও সাংবাদিকতা করেছেন।

অপহরণের পর প্রায় দেড় মাস একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজার। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে বনশ্রীর বাসায় ফিরেছেন তিনি। মোবাশ্বার বলেন, অনেক দিন পর দিনের আলোর মুখ দেখলেন তিনি। কারণ, তাঁকে যে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেটির দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। অন্ধকার ঘরে বন্দি থাকা অবস্থায় পাশের রুম থেকে অপহরণকারীদের টাকাপয়সা নিয়ে কথাবার্তা বলতেও শুনতেন মোবাশ্বার।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মোবাশ্বার হাসান সিজার সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। সাংবাদিকদের কাছে অপহরণ ও ফিরে আসা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন মোবাশ্বার।

যেভাবে অপহরণ
অপহরণের দিনের বর্ণনা দিয়ে সিজার বলেন, ঘটনার দিন তিনি ইউএনডিপির একটি অনুষ্ঠান শেষে বনশ্রীর বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় তিনি উবারের একটি গাড়িতে করে রোকেয়া সরণির দিকে যাচ্ছিলেন। গাড়িতে বসে আপন মনে তিনি নিজের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছিলেন। হঠাৎ এক ব্যক্তি সিগন্যাল দিয়ে তাঁর গাড়ি থামিয়ে দেন। গাড়ি থামার পরপরই ওই ব্যক্তি বলেন, গাড়িটি চোরাই গাড়ি, তুমি দ্রুত গাড়ি থেকে নামো। এর পর পেছন থেকে কোনো এক ব্যক্তি তাঁর চোখে মলম লাগিয়ে দেয়। একই সঙ্গে পেছন থেকে জোরে মুখ চেপে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি।

সিজার আরো বলেন, জ্ঞান ফিরে তিনি দেখেন, তাঁকে একটি বদ্ধ ঘরে রাখা হয়েছে। ঘরটির দরজা-জানালা সব বন্ধ। একটি ময়লা তোশকের ওপরে শুয়ে আছেন তিনি। তাঁর হাত পেছনের দিকে বাঁধা। এ সময় তিনি পাশের রুম থেকে বেশ কয়েকজন লোকের কথা বলার শব্দ শুনতে পান। ওই দিন থেকেই অন্ধকার ওই ঘরে বন্দি ছিলেন সিজার।

যেভাবে ফিরলেন
অপহরণের পর বাড়িতে ফেরার বর্ণনা দিতে গিয়ে সিজার বলেন, গতকাল রাতে তাঁর চোখ বেঁধে তাঁকে একটি গাড়িতে তুলেছিল অপহরণকারীরা। এরপর তাঁকে বিমানবন্দর সড়কের কোনো এক জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় অপহরণকারীর। তারা বলে, তুই চলে যা। পেছনের দিকে তাকালে মেরে ফেলব। গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর একটুখানি স্বাভাবিক হয়ে সেখান থেকে একটি সিএনজি ঠিক করে বাসায় রওনা দেন মোবাশ্বার। রাত ১টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন।

কেন অপহরণ করা হয়েছিল—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিজার বলেন, ‘অপহরণকারীরা ভেবেছিল আমি অনেক ধনী, আমার অনেক টাকাপয়সা আছে।’ এর আগে সকালে মোবাশ্বারের বোন তামান্না তাসনিম এনটিভি অনলাইনকে জানান, গতকাল রাত ১টার দিকে তাঁর ভাই সিজার সিএনজিতে করে বাসায় ফিরেছেন। ফেরার সময়কালে বাসার নম্বরে ফোন করে জানান, তাঁর কাছে সিএনজি ভাড়া নেই, তাই ভাড়া নিয়ে কেউ যেন বাসার নিচে আসেন। তামান্না বলেন, বাসায় ফেরার পর তাঁকে অনেকটা বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল।

শিক্ষক মোবাশ্বার ফিরে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘সিজার ফিরে আসার বিষয়টি তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল রাতেই আমাদের জানানো হয়েছে। পুলিশ এখনো সিজারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলেনি। একটু সুস্থ ও স্বাভাবিক হলেই তাঁর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলা হবে।’