যুক্তরাষ্ট্রের জোংজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ করতে বুধবার তুরস্কে জাংরি সভায় মিলিত হচ্ছে ইসলামি সহযোগী সংস্থা (ওআইসি)।মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সবচেয়ে শক্তিশালী এ জোট মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র শহর জেরুজালেমকে রক্ষায় কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তা নিয়ে এরই মধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুাং হয়েছে।বরাবরের মতো ওআইসি ফিলিস্তিন ইস্যুতে দায়সারা কথা বলবে নাকি অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সাত দশক ধরে দখলদারির অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেবে তা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মাঝে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

তবে তুর্কি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওআইসি এবার আর অতীতের ন্যায় ঠুটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করবে না। বরং জোংজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে কড়া জবাব দেবে।এ ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সম্মিলিত মুসলিম সামরিক জোট গড়ার মাধ্যমে দখলদার ইসরাইলকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে আজ।ফিলিস্তিনের পক্ষে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর এই বহুল প্রত্যাশিত সিদ্ধান্তগুলো ‘ইস্তানবুল ঘোষণা’ হিসেবে ওআইসির এ জরুরি সভায় গৃহীত হতে পারে। গত বুধবার জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পরই ওআইসির বর্তমান চেয়ারম্যান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এ জরুরি সভা আহ্বান করেন। ১৯৬৯ সালে ওআইসি প্রতিষ্ঠার একটি বড় উদ্দেশ্য ছিল- ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা।তাই আজকের ওআইসি সভা থেকে ইসরাইলি দখলদারের বিরুদ্ধে বিশেষ সিদ্ধান্ত আসবে বলেই বিশ্বাস সবার।একই সঙ্গে মার্কিন সিদ্ধান্তের বিপক্ষেও আজকের সিদ্ধান্ত হবে মোক্ষম জবাব, এটিই বিশ্বাস সবার।আজকের সভা থেকে যেসব সিদ্ধান্ত আসতে পারে তা নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলেছে তুর্কি গণমাধ্যম ইয়েনি সাফাক।সাফাকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজকের সভায় সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত হতে পারে জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা।এ ছাড়া ইস্তানবুল ঘোষণায় আরও থাকবে-জেরুজালেম ইস্যুটি সব আঞ্চলিক আলোচনায় থাকবে। জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের ভূমি দখলকারী ইসরাইলকে তাদের সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোনো প্রকার শর্ত ছাড়াই দখলদাররা সরে যাবে এবং দখলদারদের কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বা গুরুত্বপূর্ণ দেশ বৈধতা দেবে না।ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাতিল ও অকার্যকর ঘোষণা করতে হবে। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর বাধা প্রদান করতে হবে।ঘোষণায় মুসলিম দেশগুলোর জন্যও বার্তা থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- যেকোনো মুসলিম দেশকে জেরুজালেমইস্যুতে আপস করা চলবে না। জেরুজালেম শান্তি আলোচনার কোনো ইস্যু হতে পারে না। ইসরাইলিদের জেরুজালেম নিয়ে এমন কূটকৌশল ব্যর্থ করতে মুসলিম বিশ্বের আন্তরিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। মুসলিম দেশ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা এবং এ সংক্রান্ত সব ধরনের সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধিতা করতে হবে।
এ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ন্যায্য আন্দোলনকে সফল করতে এবং দখলদার ইসরাইলকে শায়েস্তা করতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শক্তিশালী সামরিক জোট গড়ারও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।জেরুজালেমের এই দখল প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯১৭ সাল থেকে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের অবৈধ স্থাপনা গড়ে আসছে ইসরাইলিরা। এতে ব্রিটিশ ও আমেরিকানদের সমর্থন ছিল।সর্বশেষ গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দখলকৃত জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দিয়ে অবৈধ দখলদারিত্বের বৈধতা দান করেন।এর পরই পুরো মুসলিম বিশ্ব ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ‘ইন্তিফাদা’ বা গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয় এবং বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করে।ফিলিস্তিন সরকারের পরিচালনায় থাকা ফাতাহ দলের পক্ষ থেকেও ফিলিস্তিনি জনগণকে ট্রাম্পের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।এর পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে চারজনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে ১৪শর বেশি মানুষ।