প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আগমনে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের ওপর মারাত্মক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। প্যারিসে ওয়ান প্লানেট সামিটে উচ্চপর্যায়ের সভায় এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আসার ফলে বাংলাদেশ বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। মানবিক কারণে আমরা কক্সবাজারে ১ হাজার ৭৮৩ হেক্টর বনভূমির উপর তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, যদিও এই ঝুঁকির জন্য আমরা দায়ী নই। আমরা সীমিত সম্পদ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি প্রশমন ও অভিযোজন করে যাচ্ছি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রণীত টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মূলস্রোতে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় জিডিপির ১ শতাংশ ব্যয় করে আসছে।
বিবৃতিতে সকল অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশ কর্মকাণ্ডে ওয়াটার সাসটেইনেবিলিটি ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ শীর্ষ সম্মেলনে একশ’ বিশ্ব নেতাসহ বেসরকারি সংগঠন, ফাউন্ডেশন এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রায় ২ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে তার অঙ্গীকারের কথা পুনরায় উল্লেখ করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, তার সরকার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ও বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন রক্ষায় ৫০ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে একটি বিশাল প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে। উপকূলীয় এলাকার জনগণকে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভাঙন এবং লবণাক্ত পানি থেকে রক্ষায় সবুজ বেষ্টনি সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমি এসব এলাকায় বনায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা যোগ করেন, সরকার আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশে বনায়ন ২ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করবে। ফলে বিদ্যমান বনভূমি ২২ শতাংশ থেকে প্রায় ২৪ শতাংশে উন্নীত হবে। পার্টনারদের সমর্থনসহ আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে এই টার্গেট পূরণে আমরা প্রচেষ্টা জোরদার করব।
শেখ হাসিনা জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারপূরণ এবং ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, একমাত্র দায়িত্ব ভাগাভাগির মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে নিরাপদ করতে পারি। আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার ও কর্মকাণ্ড শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।