যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাস টার্মিনালে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযোগের মুখে থাকা বাংলাদেশি যুবক আকায়েদ উল্লাহ হামলার ঠিক আগে আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। আকায়েদ (২৭) ওই পোস্টে লিখেন, ‘ট্রাম্প, তুমি তোমার জাতিকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছ।’ আকাইদ উল্লাহর বাসা থেকে উদ্ধার করা তার নামের পাসপোর্টেও হাতে লেখা নোটে দেখা যায়, ও আমেরিকা, তোমার রাগেই মৃত্যুবরণ করো।

আকাইদের বহন করা পাইপ বোমা ডিভাইসটির কিছু অংশ বিষ্ফোরিত হওয়ায় তাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। যদিও এখন পর্যন্ত কেউ এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি, তারপরও এটাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। পাঁচটি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে আকাইদকে। সেগুলো হলো, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সরঞ্জাম সরবরাহ, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির উদ্দেশ্যে অস্ত্র ব্যবহার, জনবহুল এলাকায় বোমা হামলা, বোমা বিষ্ফোরণে সম্পদের ক্ষতি ও ধ্বংসাত্বক ডিভাইস ব্যবহার।

ক্রিসমাস ট্রির লাইট, তার ও নয় ভোল্টের ব্যাটারি দিয়ে বোমাটি বানায় আকাইদ। এরপর সেটাতে মেটালের স্ক্রু ব্যবহার করে, ফলে আরো বেশি ক্সতি করতে সক্ষম হয়ে উঠে বোমাটি। এরপর জিপ দিয়ে সেটা শরীরের সঙ্গে ভালোমতো আটকে নেয়।
প্রাথমিক তদন্তে আকাইদ আরো জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য জায়গায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে মার্কিন সরকারের নীতির কারণে এমন হামলা ঘটিয়েছে সে। হামলার অনেকগুলো কারণের একটি ছিলো, যত বেশি সম্ভব মানুষকে সন্ত্রাসবাদের শিকার করা। বেশি মানুষকে আক্রমণ করার লক্ষ্য নিয়েই কর্মদিবসে এই হামলা চালানো হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রসিকিউশন আকায়েদের বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে অভিযোগ দায়ের করে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়া এবং জনবহুল এলাকায় অস্ত্র ও বোমার ব্যবহার। মার্কিন প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত সোমবার সকালে ম্যানহাটন পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান আকায়েদ উল্লাহ। এতে তিনি নিজে এবং আরো তিনজন আহত হন।

আকায়েদ বাংলাদেশি। ২০১১ সালে অভিবাসী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। নিউইয়র্কের ব্রুকলিন এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন আকায়েদ। নিউইয়র্কে ভাড়ায় গাড়ি চালাতেন তিনি। তবে সম্প্রতি তাঁর লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিনের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এই বোমা হামলার পেছনে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের হাত আছে কি না, তা তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত আকায়েদের সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগসূত্র খুঁজে পায়নি তারা। এমনকি এর আগে কখনো গ্রেপ্তারও হননি তিনি। তবে তার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোগাযোগ ছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ।

প্রসিকিউটররা যে অভিযোগ করেছেন, সে অনুসারে আটকের পর আকায়েদ আইএসের হয়ে এই কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি আইএস বাহিনীকে লক্ষ্য করে মার্কিন বিমান হামলা, এমন বিস্ফোরণের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বলেও তদন্তকারীদের কাছে বলেছেন। ২০১১ সালে ফ্যামিলি ভিসা নিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে যুক্তরাষ্ট্র যান আকায়েদ উল্লাহ। পরে বিয়ে করতে ২০১৬ সালে ঢাকায় আসেন আকায়েদ। সেই সময় থেকে তার স্ত্রী ঢাকাতেই বসবাস করছেন। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকায় তার স্ত্রী ও শ্বশুরকে সোমবার তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে।

এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে আকায়েদ তার শিশুসন্তানকে দেখতে ঢাকায় এসেছিলেন, এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। সেই সময় আকায়েদ কাদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করেছে বা কাদের সঙ্গে মিশেছে অথবা বাংলাদেশের অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তার কোনো রকম যোগাযোগ আছে কিনা তা জানতে তারা আকায়েদের স্ত্রী ও শ্বশুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।