বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন থাকার সময় কোনো মাধ্যমে আমার পদের অপব্যবহার করিনি। আমার পদের অন্যায় প্রভাব খাটাইনি।মঙ্গলবার রাজধানীর বকশী বাজারে বিশেষ জজ আদালতে-৫-এ হাজির হয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য উপস্থাপনের সময় খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। বেলা সোয়া ১১টা থেকে ২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। জিয়া এতিমখানা ও দাতব্য দুর্নীতি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পাওয়ার পর আত্মপক্ষ সমর্থনে বাকি বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ পায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।মঙ্গলবার এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় তার আত্মপক্ষ সমর্থন শেষ হওয়ার পর দুইপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।
মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য ছিল। গত বৃহস্পতিবার আদালতে খালেদা জিয়া হাজির না হওয়ায় জামিন বাতিল করে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। ওই দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বাকি বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য হাজির না হওয়ায় এই আদালতের বিচারক আখতারজ্জামান খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে শুরুতেই জামিন চাইলে আদালত পৃথক দুই মামলায় তা মঞ্জুর করেন।আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় খালেদা জিয়া আদালতকে বলেছেন, তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাওয়ার যোগ্য। আদালতের কাছে ন্যায়বিচার দাবি করে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ বানোয়াট ও অপ্রমাণিত। আমি দৃঢ়ভাবে সব অভিযোগ অস্বীকার করছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন থাকার সময় কোনো মাধ্যমে আমার পদের অপব্যবহার করিনি। আমার পদের অন্যায় প্রভাব খাটাইনি। আমাদের পারিবারিক বাসস্থান ৬ মঈনুল রোড, এখানে আমার পরিবারের সবাই থাকতেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নয়। আমি আমার পদে থাকার সময় কারও মাধ্যমে আমার পদের প্রভাব খাটাইনি। আমি কাউকে কোনো অন্যায় আদেশ প্রদান করিনি। আমি আমার পদে থাকার সময় কারও কোনো অর্থের দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হইনি। কাউকে অনৈতিকভাবে লাভবান করিনি। আমি আমার পদে আসীন থেকে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো আইন ভঙ্গ করিনি ও কোনো অপরাধ করিনি।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্কের শুনানি ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাফাই সাক্ষ্যের জন্য দিন ধার্য ছিল। পরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও একই দিনে সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আসামি হলেন খালেদা জিয়া, তাঁর বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এর মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আসামি হলেন খালেদা জিয়াসহ চারজন। এর মধ্যে দিয়ে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নয় বছর আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলা বিচারের শেষ পর্যায়ে উপনীত হল। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হলেই মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসবে।
এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন।মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।খালেদা জিয়া, সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ এ মামলায় জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান গত নয় বছর ধরে দেশের বাইরে, তার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এছাড়া কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।