ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র পাওয়ার কথা জানিয়ে বিপাকে পড়েছেন তেল আবিবে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ম্যাং ম্যাং লিন (সধহম সধহম ষরহ)। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইসরায়েল দাবি করেছে, মিয়ানমারকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে তেল আবিব। অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে ওই সংবাদমাধ্যম। তেহরানভিত্তিক পার্স টুডের খবরেও রাশিয়ার আরবি ভাষার নিউজ চ্যানেল রুসিয়া আল-ইয়াওমের বরাতে ম্যাং লিনকে তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম আর্মি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তেল আবিবে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ম্যাং ম্যাং লিন দাবি করেন, গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারে ইসরায়েলি অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েলের খবর অনুযায়ী, এমন বক্তব্যের কারণেই ম্যাং লিনকে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইসরায়েল ও পার্স টুডে জানায়, তেল আবিব মিয়ানমারের কাছে সব ধরনের অস্ত্র বিক্রির কথা অস্বীকার করেছে। এ নিয়ে গত এক মাসে দ্বিতীয়বারের মতো ইহুদিবাদী এই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রির কথা অস্বীকার করা হল।২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার লক্ষ্যে তেল আবিব সফরে যান মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং। সে সময় ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট রুভেন রিভলিনের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা শুরুর পর খোদ ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে মিয়ানমারে নতুন করে অস্ত্রের চালান পাঠানোর খবর প্রকাশিত হয়।অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোতে মিয়ানমারে ইসরায়েলি অস্ত্র রফতানি স্থগিত করা হয়েছে বলে খবর দেওয়া হয়। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো সে সময় জানায়, সমালোচনার মুখে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাভিগদর লিবারম্যান মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র রফতানির রাশ টেনে ধরেছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় দেশটিতে ইসরায়েলি অস্ত্র রফতানিতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে বাস্তবেই এটি স্থগিত হওয়ার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।ফ্রান্সভিত্তিক গোয়েন্দা তথ্য বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিনের খবরে তখন বলা হয়েছিল, কৌশলগতভাবে মিয়ানমারে সামরিক সরঞ্জাম রফতানির লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে ওই প্রতিবেদনের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা দফতর।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরব ব্যক্তিদের একজন মানবাধিকারবিষয়ক ইসরায়েলি আইনজীবী ইটে ম্যাক। দেশটিতে অস্ত্র রফতানির বিরুদ্ধেও তিনি একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তবে মিয়ানমারের কাছে ইসরায়েলি অস্ত্র রফতানি স্থগিতের খবরকে পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন না এ অ্যাক্টিভিস্ট। তার মতে, এমন খবর সন্দেহজনক। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত আবারও অস্ত্র বিক্রির অব্যাহত থাকার তথ্য দেওয়ায় সেই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।