ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসকে ফুলেল শুভেচ্ছা আর তোপধ্বনিতে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে বাংলাদেশ।মিয়ানমার সফর শেষে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মেঘদূতে করে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ৩টায় ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান পোপ। সেখানে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
৩০ বছরে এই প্রথম কোনো পোপ বাংলাদেশ সফরে এলেন। সর্বশেষ সফর করেছিলেন পোপ দ্বিতীয় জন পল, ১৯৮৬ সালে। পোপ বিমান থেকে নেমে আসার সময় ২১বার তোপধ্বনিতে তাকে স্বাগত জানানো হয়। দুটি শিশু ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ৮৮ বছর বয়সী খ্রিস্টান ধর্মগুরুকে।কিছুটা দূরে একদল শিশু তখন রবি ঠাকুরের আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে গানের সঙ্গে ঝালর নাড়িয়ে নৃত্য পরিবেশন করছিল। সার বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা।বিমানবন্দও থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসা সারাবিশ্বের ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেই সাভারের স্মৃতিসৌধে যান তিনি। সেখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আত্মার মাগফেরাত কামনায় কিছু সময় নীরবতা পালন করেন পোপ। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। রাতে পোপের সম্মানে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। তারপর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পোপ ফ্রান্সিস। এদিন অন্যান্য কূটনীতিকদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করবেন তিনি। সফর সূচি অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খ্রিস্টধর্মীয় উপাসনা ও যাজক অভিষেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন পোপ। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তার। একই দিনে বাংলাদেশের ক্যাথলিক বিশপসহ অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।সফরের শেষ দিন ২ ডিসেম্বর (শনিবার) মাদার তেরেসা ভবন পরিদর্শন করবেন পোপ। পরিদর্শন করবেন বিভিন্ন মিশনারিও। বৈঠকে বসবেন খ্রিস্টধর্মের নেতাদের সঙ্গে। বিকেলে তিনি নটরডেম কলেজে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে। সফর শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় রোমের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়বেন পোপ ফ্রান্সিস।গতবছর প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের ক্যাথলিক বিশপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানালে পোপ বছরের শেষ দিকে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ আগস্ট এই ধর্মগুরুর ঢাকা সফরের সূচি ঘোষণা হয়। এর আগে ১৯৮৬ সালে পোপ জন পল এবং ১৯৭০ সালে পোপ ষষ্ঠ পল বাংলাদেশ সফর করেন
সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশে প্রার্থনা করবেন পোপ ফ্রান্সিস। এরপর ভ্যাটিকান দূতাবাসে সাক্ষাৎ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।বিকালে তিনি যাবেন কাকরাইলের রমনা ক্যাথেড্রালে, সেখানে আর্চবিশপ হাউজে বিশপদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। শান্তি কামনায় আন্তঃধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত ঐক্য বিষয়ক সভায় অংশ নেবেন।সফরের শেষ দিন শনিবার সকালে তেজগাঁওয়ে মাদার টেরিজা হাউজ পরিদর্শনে যাবেন পোপ। এরপর তেজগাঁও হলি রোজারিও চার্চে খ্রিস্টান যাজক, ধর্মগুরু ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে চার্চের কবরস্থান পরিদর্শন করবেন। দুপুরের পর ঢাকায় নটরডেম কলেজে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করবেন।সফরের ইতি টেনে বিকাল ৫টায় শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়বেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু। তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ভ্যাটিকানের ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস। রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান। পোপ ফ্রান্সিসের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে। ক্যাথলিক পুরোহিত হিসেবে তার অভিষেক হয় ১৯৬৯ সালে। পুরো আমেরিকা অঞ্চল এবং দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ তিনি।