মিয়ানমার সফররত পোপ ফ্রান্সিস তার ভাষণে রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার না করায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীরা। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আঙ্গনেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।এইচআরডব্উি’র এশিয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেন, পোপ একটি বড় সুযোগ হারিয়েছেন।তবে মিয়ানমারে ইইউ রাষ্ট্রদূত মনে করেন, সরাসরি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে পোপের কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক।রোহিঙ্গা নাম না নেয়াকে মিয়ানমারের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভ্যাটিকান প্রধানের সতর্ক কূটনৈতিক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।গত আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার আগেই ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের মিয়ানমার সফরের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়।দেশটিতে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘু মানুষের বিপন্নতায় ভ্যাটিকান ও মিয়ানমারের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যই এ সফরের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।সফরে পোপের রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ না করার পেছনে সেই কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে একটি বড় কারণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

আর বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়, ধর্মীয় নেতার চেয়ে অনেক বেশি কূটনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে মিয়ানমারে পা রেখেছেন পোপ ফ্রান্সিস।মিয়ানমারের ৭ লাখের মতো খ্রিস্টান রয়েছে যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৩ শতাংশ। তাদের নাজুক অবস্থার কথা বিবেচনা করেছেন পোপ।গতকাল মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠকের পর ভাষণ দেন পোপ।ভাষণে তিনি সম্প্রীতির ডাক দিয়ে প্রতিটি জাতিসত্ত্বা ও জাতিগোষ্ঠীকে সম্মান দেখানোর আহ্বান জানালেও রোহিঙ্গা ও তাদের দুর্দশার কথাটি উল্লেখ করেননি।মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে সমর্থন দেওয়ার জন্য পোপকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উল্লেখ করার আহ্বান জানিয়েছিল।তবে পোপের সফরের আগে মিয়ানমারের ক্যাথলিক চার্চ তাকে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, এ শব্দ ব্যবহার করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। পোপকে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করতে বলার পরামর্শটি দেন মিয়ানমারের কার্ডিনাল আর্চবিশপ চার্লস মোং বো।গত ২৫ আগস্ট থেকে সেনা অভিযানের পর ৬ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে বর্ণনা করেছে।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি, মিনায়মারের সেনাবাহিনী রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।পোপ তার ভাষণে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি সরাসরি উচ্চারণ না করলেও জাতিগত অধিকারের পক্ষে অত্যন্ত জোরাল বক্তব্য রেখেছেন।