গণতন্ত্র শুধু ব্যালট বাক্সে ভোট দেওয়া নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে যা ঘটে, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনের পর যা হয়, তার সবকিছুই গণতন্ত্রের অংশ। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে সবাই তার ফল মেনে নেবে। নির্বাচনে স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণভাবে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে তার ফলে ভোটাররা বেশি আস্থাশীল হবে।মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।বার্নিকাট বলেন, একটা কার্যকর গণতন্ত্রে সব রাজনৈতিক দলের মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ থাকতে হবে। নাগরিকদের ভোটার হওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। কোনও ধরনের বাধা বা চাপমুক্ত থেকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনও স্থান নেই।
যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক দল, তরুণ ও নারী নেত্রীর সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিকরণ রাজনীতি নিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে বার্নিকাট বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে দৃঢ় করতে নারীদের নিরাপদ অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখনও বেশ কয়েকজন নারী নেত্রী থাকার পরও রাজনৈতিক দলে ও নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়া পিছিয়ে রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, মেয়েরা যেমন ঘর গোছাতে পারেন, তেমনি রাজনীতিও গোছাতে পারেন। একটানা ৩১ বছর ধরে তারাই ক্ষমতায় রয়েছেন। সিইসি বলেন, ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদে প্রথবারের মতো নারী হিসেবে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা রাখেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১৯৯১ সালে দেশে প্রথমবারের মত নারী প্রধানমন্ত্রী হন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকে নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েই চলছে। বর্তমানে সংসদে স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা সবাই নারী। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সকল স্থানীয় সরকারেও নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কাজেই রাজনীতিতে নারীদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে আমরা এগিয়ে।কেএম নূরুল হুদা বলেন, দেশে একটানা ৩১ বছর ধরে নারীরা ক্ষমতায় রয়েছে। তাই আজ প্রমাণ হয়েছে নারীরা যেমন ঘরও গোছাতে পারেন, তেমনি রাজনীতিও গোছাতে পারেন।প্রশাসনে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তুলে ধরে সিইসি বলেন, দেশে বর্তমানে ১০ জন নারী সচিব রয়েছে। এছাড়া ১ জন বিভাগীয় কমিশনার, ৬ জেলা প্রশাসক, ১৬ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নারীরা কর্মরত আছেন। নির্বাচনে নারী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের অধিক হারে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হস্তক্ষেপে কোনো সুযোগ নেই।তবে দলে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য অন্তর্ভূক্ত করতে চাপ প্রয়োগ করতে পারি-এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি যখন আমরা সংলাপে অংশ নিই তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ইসলামী দলগুলো কোনো নারী প্রতিনিধি নিয়ে আসেননি। তবে কয়েকটি দল নারী প্রতিনিধি নিয়ে সংলাপে অংশ নিয়েছিল। অবশ্য আমরা নারী নেত্রীদের সঙ্গে সংলাপ করেছি। তারা রাজনীতিতে নারী অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে ভূমিকা নিতে বলেছেন।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘অ্যাডভান্সিং উইমেনস লিডারশিপ ইন ইলেকশন’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রমুখ।