আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলাদেশের মাটিতে এখন অনেক গভীরে। ধাক্কা দিয়ে এই বটবৃক্ষের পতন ঘটানো যাবে না।মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবনের সামনে ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে পতন ঘটানো হবেÑবিএনপির নেতাদের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবার এক আলোচনায় কাদেরকে ‘বয়াতি’ আখ্যায়িত করে তার দল আওয়ামী লীগ ছোট্ট একটা ধাক্কা খেলেই সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনের মধ্যে পড়ে যাবে’ বলে তাকে মনে রাখতে বলেন।এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে এক স্মরণসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব, ধাক্কা দিয়ে আওয়ামী লীগকে ফেলা যাবে না; আওয়ামী লীগ বিএনপি না।ওই মেয়র হানিফের জনতার মঞ্চের এক ধাক্কায় সরকারের পতন। মনে আছে আপনাদের… আওয়ামী লীগ সেই দল। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে। এই আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলাদেশের মাটিতে এখন অনেক গভীরে, ধাক্কা দিয়ে এই বটবৃক্ষের পতন হবে না।ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবনের সামনে এ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।এতে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেতাদের কণ্ঠে উচ্চারিত ‘গণঅভ্যুত্থান’ শব্দটি এখন জাদুঘরে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের।তিনি বলেন, আপনারা (বিএনপি) রঙ্গিন স্বপ্ন দেখছেন, দেখতে থাকেন এই রঙ্গিন স্বপ্ন। শেখ হাসিনা উন্নয়ন-অর্জন দিয়ে গণঅভ্যুত্থান শব্দটিকে জাদুঘরে দিয়ে দিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থান এখন জাদুঘরে, গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নের নামান্তর। এই দুঃস্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই। রেদশের জনগণ শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নে এত খুশি যে আপনারা সাড়ে আট বছর বারে বারে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন, জনগণ সাড়া দেয় নি। সাড়ে আট বছরে সাড়া দেয়নি, আগামী এক বছরেও জনগণ আপনাদের ডাকে সাড়া দেবে না।
আগামী নির্বাচন কে সামনে রেখে মানুষের ঘরে ঘরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের ওবায়দুল কাদের বলেন, “একানব্বই সালের নির্বাচনে আমরা তো জিতেই গিয়েছি… নানান ষড়যন্ত্র ছিল, কিন্তু আমরা জিতেই গেছি… জেতার আগেই জিতে গেছি এই মন মমানসিকতার পুনরাবৃত্তি যেন আগামী নির্বাচনে না হয়।বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতি পাওয়ায় দেশে নব জাগরণ শুরু হয়ে গেছে। এই জাগরণের ঢেউকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাখতে হবে, ঘরে ঘরে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিন।স্মরণসভায় বক্তব্য চলাকালীন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পরস্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত দুই নেতা শাহে আলম মুরাদ ও মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকনকে মঞ্চে ডেকে এনে তারা ‘মিলে গেছে’ বলে জানান ওবায়দুল কাদের।সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার মাঝখানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, শাহে আলম কই, মেয়র সাহেব কই, এদিকে আসো সাইদ খোকন… মুরাদ।তারা মঞ্চের সামনে আসার পর সবাইকে দেখিয়ে কাদের বলেন, এই দেখুন, তারা মিলে গেছে।এ সময় তিনি বলেন, এই দেখুন এক হয়ে গেছে, সামান্য ভুল বুঝাবুঝি ছিল, এক হয়ে গেছে। মহানগর আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ, আজকে আমার এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য নেতা মেয়র হানিফকে স্মরণ করতে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে সবার সামনে তুলে ধরব; সেই স্বপথই আপনাদের সামনে দিলাম।অনেক দিন থেকেই ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের দ্বন্দ্ব চলছিল।দলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দুই নেতার কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন সময়ে হাতাহাতিতে পর্যন্ত জড়ানোর পর গত ১৬ নভেম্বর তা নতুন মাত্রা পায়। ওইদিন শাহে আলম মুরাদের একটি অনুষ্ঠান ঠেকাতে অনুষ্ঠানস্থলের সামনে মেয়র সমর্থকদের একটি পক্ষ ময়লার স্তুপ ফেলে রাখে অভিযোগ অনেকের।প্রয়াত মেয়র হানিফের স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।