কুমিল¬ায় জমজের এক সন্তানকে পেটে রেখে অস্ত্রোপচার শেষ করার ঘটনায় মা খাদিজা আক্তারকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে এবং সংশি¬ষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।এছাড়া ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার (২৬ নভেম্বর) বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে আদালতের আদেশ পালন করতে বলা হয়েছে।আদালতে শুনানি করেন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ বিষয়ে প্রতিবেদন নজরে আনা আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের পক্ষে ছিলেন আব্দুল মতিন খসরু।অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক হোসনে আরা বেগমের পক্ষে ছিলেন এ কিউ এম সোহেল রানা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ‘জমজের একটিকে পেটে রেখেই অস্ত্রোপচার শেষ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত ১৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আলগিরচর গ্রামের প্রবাসী আউয়াল হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে গৌরীপুরের লাইফ হসপিটাল ও ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেখানে ওইদিনই সিজারের মাধ্যমে তার একটি মেয়ে সন্তান হয়। তখন অন্তঃসত্ত্বার স্বজনেরা খাদিজার পেটে জমজ বাচ্চা রয়েছে জানালে অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক শেখ হোসনে আরা বলেন, খাদিজার পেটে বাচ্চা একটিই। অন্যটি টিউমার। চারদিন ভর্তি রাখার পর তাকে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার কয়েকদিন পর খাদিজার ফের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ১৫ দিন পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায়, খাদিজার পেটে আরেকটি বাচ্চা রয়েছে।পরে গত ২৩ অক্টোবর রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৫ অক্টোবর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেট থেকে একটি মৃত ছেলে সন্তান বের করা হয়।ওই ঘটনায় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর গত ২৯ অক্টোবর বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনজনকে তলব করেন। ০৭ নভেম্বর হাজির হয়ে তাদের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

আইনজীবী মিলন পরে বলেন,বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।সরকারি মালিগাঁও হাসপাতালের সহকারী সার্জন হোসনে আরা তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ‘লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ খাদিজা আক্তার (১৮) নামে এক প্রসূতির যমজ সন্তানের একজনকে ভূমিষ্ঠ করিয়ে আরেকজনকে পেটে রেখেই অস্ত্রোপচার সেলাই করেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।খাদিজার মা আমেনা বেগমের অভিযোগ, গত ১৮ সেপ্টেম্বর হোসনে আরা ‘লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ তার মেয়ের অস্ত্রোপচার করেন। তার গর্ভে দুটি সন্তান থাকলেও অস্ত্রোপচার করে তিনি একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ করান; আরেকটি সন্তানকে টিউমার বলে অপারেশনের কাজ শেষ করেন।এরপর আমেনা এক মাস ধরে খাদিজাকে নিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে ছুটোছুটি করেন।

পরে হোমনার একটি ক্লিনিকে আলট্রাসনোগ্রাম করলে চিকিৎসক জানান, খাদিজার পেটে টিউমার না, আরেকটি সন্তান রয়েছে। পরে তারা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।এদিকে ঘটনাটি প্রকাশের পর দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মো. জালাল হোসেন চিকিৎসক হোসনে আরাকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠান। গঠন করেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।প্রাথমিক তদন্তের পর ‘লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি’ সিলগালা করে দেন সিভিল সার্জন মুজিবুর রহমান।ওই ঘটনায় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনা হলে পর গত ২৯ অক্টোবর বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনজনকে তলব করে।কুমিল¬ার সিভিল সার্জন, কুমিল্লার গৌরীপুরের লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এবং অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক শেখ হোসনে আরাকে ৭ নভেম্বর হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।ক্লিনিকটির মালিক ও অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক আদালতে দুই দফা হাজিরের পর রোববার রায় ঘোষণা করল হাই কোর্ট।