গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিদ্যুতের খুঁটিবাহী বিকল ট্রাকের সঙ্গে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় রেলওয়ের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। এদিকে শনিবার বিকেলে ট্রাকের চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে রেলওয়ের জয়দেবপুর জংশনের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আশরাফ উদ্দিন বাদী হয়ে কমলাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশি বিভাগীয় ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, গাজীপুরে কালিয়াকৈরের বক্তারপুরে বিদ্যুতের খুঁটিবাহী ট্রাকের সঙ্গে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় রেলওয়ের পক্ষ থেকে দূর্ঘটনার পরপরই শুক্রবার চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা হলেন, রেলওয়ের পাকশি বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ মো. আসাদুল হক, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মোঃ শওকত জামিল মহসী, বিভাগীয় প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) শেখ হাসানুজ্জামান ও বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার সজীব কুমার রায়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

এদিকে রেলওয়ের কমলাপুর থানার ওসি মো. ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, শনিবার বিকেলে রেলওয়ের জয়দেবপুর জংশনের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আশরাফ উদ্দিন বাদী হয়ে কমলাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ট্রাকের চালক ও হেলপারকে আসামী করা হয়েছে। রেলওয়ের ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে অবৈধ ভাবে রেললাইন অতিক্রম করার সময় রেল লাইনের উপর থেমে ট্রেন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করা এবং চলন্ত ট্রেনে আঘাত করে হত্যাসহ ট্রেনের যাত্রী আহত এবং ক্ষয়ক্ষতি করার অপরাধে এ মামলাটি দায়ের করা হয়।

প্রসঙ্গতঃ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিদ্যুতের খুঁটিবাহী রয়েল গ্রুপের একটি ট্রাক কালিয়াকৈর থেকে চন্দ্রা যাচ্ছিল। পথে হাইটেক পার্ক সংলগ্ন কালিয়াকৈর উপজেলার বক্তারপুর এলাকার একটি অবৈধ রেলক্রসিং পয়েন্ট দিয়ে ঢাকা-খুলনা রেললাইন পার হওয়ার সময় লাইনের উপর ট্রাকটি বিকল হয়ে পড়ে। এসময় ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে ওই ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে ইঞ্জিনের ভিতরে চাপা পড়ে ট্রেনের সহকারী চালক নূর আলম শরীফ (৪৫) ঘটনাস্থলেই নিহত এবং চালক শফিউল ইসলাম সেলিম (৩৫)সহ অন্ততঃ ২০জন আহত হয়। সংঘর্ষে ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনের অংশ ও বিদ্যুতের খুঁটিবাহী ট্রাকটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং বগির সংযোগস্থলের পার্টিং ভেঙ্গে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ চারটি বগি অন্য ৭টি বগি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এসময় ইঞ্জিনসহ বিচ্ছিন্ন হওয়া ট্রেনের সামনের অংশটি খুঁটিসহ ওই ট্রাকটিকে হেঁচড়ে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে খাড়াজোড়া এলাকার ব্রীজের পাশে গিয়ে থামে এবং অপর অংশটি ঘটনাস্থলেই পড়ে থাকে। ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে হতাহতদের উদ্ধার করে এবং দূর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটিকে পার্শ্ববর্তী মৌচাক রেলওয়ে ষ্টেশনে সরিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী ওই রুটে প্রায় সাড়ে ৬ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। নিহত শরীফ ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার শশা গ্রামের মৃত মমিন উদ্দিন শরীফের ছেলে।