রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগে আরও দুটো চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ লেদার, ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো ২০১৭’ -এর উদ্বোধন করে তিনি এ ঘোষণা দেন। শেখ হাসিনা বলেন, চামড়া শিল্প খাতের সামগ্রিক বিকাশের জন্য আমরা ইতোমধ্যে সাভারে পরিবেশসম্মত চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তুলেছি।আমাদের আরও পরিকল্পনা আছে। আমি চিন্তা করছি, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগ, এ দুটি জায়গায় নতুন দুটি চামড়া শিল্প অঞ্চল আমরা গড়ে তুলব। শুধুমাত্র ঢাকায় করলে হবে না। পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।ছয় দশক ধরে বাংলাদেশে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলো গড়ে উঠেছিল মূলত ঢাকার হাজারীবাগ এলাকাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু বুড়িগঙ্গাসহ আশপাশের এলাকার পরিবেশ রক্ষায় ওই এলাকার ট্যানারিগুলো সরিয়ে দেওয়ার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।এর ধারাবাহিকতায় ঢাকার সাভারে দেশের একমাত্র চামড়া শিল্প নগরীটি গড়ে তোলা হয়। দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে হাজারীবাগের অধিকাংশ ট্যানারি ইতোমধ্যে সাভারে স্থানান্তরও করা হয়েছে।

সাভারে চামড়া শিল্পের সহযোগী আরও শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি অধিকাংশ ট্যানারি আমরা হাজারীবাগ থেকে সাভারে নিয়ে গেছি। পবিরেশসম্মতভাবে সাভারে এই চামড়া শিল্প নগরীটা গড়ে তোলা হচ্ছে। এর আশেপাশে যেন আরও শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠতে পারে, তার যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নেব।পণ্যের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করে একটি টেস্টিং ও ক্যালিব্রেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন সরকারপ্রধান।ঢাকার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো’ চলবে শনিবার পর্যন্ত।প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ আয়োজনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।চামড়া শিল্প খাতের উন্নয়নে চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্যকে ২০১৭ সালের ‘প্রডাক্ট অব দা ইয়ার’ ঘোষণার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।তিনি বলেন, চামড়া খাতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা আগামী ৫ বছর অব্যাহত রাখার বিষয়টি আমরা বিবেচনায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চামড়া খাতে আমাদের অধিক পরিমাণে সহায়তা প্রদানের পিছনে রয়েছে এর অমিত সম্ভাবনা।তিনি জানান, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৬.১৮ মিলিয়ন ডলারের চামড়া এবং ১৮ হাজার ডলারের পাদুকা রপ্তানি করেছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া খাতের রপ্তানি আয় বেড়ে হয়েছে এক দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।আয়কর রেয়াত এবং ওয়েট ব্লু লেদার ছাড়া চামড়াখাতে এফওবি রপ্তানি মূল্যের উপর শতভাগ এক্সপোর্ট পারফরমেন্স লাইসেন্স সুবিধা দেওয়ায় এখন রপ্তানি আরও সহজ হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।অত্যন্ত শ্রমঘন এই শিল্প বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ শিল্পের প্রায় শতভাগ কাঁচামাল দেশেই রয়েছে। সরকারের আর্থিক ও নীতি সহায়তা কাজে লাগানোয় এখন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় আসছে এ খাত থেকেই।আমি ব্যক্তিগতভাবে গর্ব অনুভব করি যখন আমার একটি দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে পারি। বা বিদেশে গেলে দেখাতে পারি যে এটা আমার দেশে প্রস্তুত।দেশীয় পণ্যের মানোন্নয়নে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাতে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে, বাজার বড় হবে। তারপরও নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।

বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শোর প্রতিবাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘থিংক অ্যাহেড, থিংক বাংলাদেশ’। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ ১৫টি দেশের শিল্পখাতের নেতৃবৃন্দ, বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও আন্তর্জাতিক ক্রেতারা এ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। শেখ হাসিনা বলেন, এ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশি চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্যের মান ও বৈচিত্র বিশ্ব পরিমন্ডলে তুলে ধরা সম্ভব হবে। চামড়া খাতে শিল্প উদ্যোক্তাদের কমপ্লায়েন্স, দক্ষ শ্রমিকের সহজলভ্যতা, প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন খরচ, উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ও সফলতা ব্যাপকভাবে প্রচার করা যাবে।আমাদের দেশে বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে চামড়া প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়েট ব্লু উৎপাদনকারী ট্যানারিগুলোর আধুনিকায়নের মাধ্যমে ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য তাদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। শিল্প স্থানান্তরের প্রণোদনা হিসাবে সাভার চামড়া শিল্প পার্ক থেকে ফিনিশড চামড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে দশ শতাংশ নগদ এবং চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

চামড়া খাতের শিল্প স্থাপনে যন্ত্রাংশ আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ঋণ নিয়ে যারা নতুন ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে চান, তারা সম্পৃক্ত হতে পারবেন।সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্র্যান্ড বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে কাজ শুরু করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।শতভাগ কাজে লাগাতে পশু জবাইয়ের পর চামড়া ছাড়ানোর কাজে তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। যারা পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো ও চামড়া সংরক্ষণের সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উপযুক্ত যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে বলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা সচেতন হবেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো সহায়তার প্রয়োজন হয়, অবশ্যই আমরা করব।বাংলাদেশের চামড়া খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে এবং চামড়াজাত পণ্য আরও বেশি পরিমাণে কিনতে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তোফায়েল আহমদ ছাড়াও চামড়াজাত পণ্য ও পদুকা প্রস্তুত ও রপ্তানীকারকদের সংগঠন এলএফএমইএবি- এর সভাপতি সাইফুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।এছাড়া শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং এফবিসিসিআই এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ভিডিও বার্তা দেন।