পুরান ঢাকার দুই আওয়ামী লীগ নেতার দ্বন্দ্বের জেরে তাদের কর্মী-সমর্থকরা আজিমপুর এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে।রাজধানীর আজিমপুরে কবরস্থান রোডে সমাবেশ করা নিয়ে কোন্দলে জড়ায় মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের অনুসারীরা। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে ইডেন কলেজের সামনে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে উভয় পক্ষ। ঘটনাস্থলে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সমাবেশের অনুমতি না থাকায় মেয়র গ্র“পের লোকজনকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে তারা পুলিশকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।জানা যায়, আজিমপুরে কবরস্থান রোডে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুরাদের নেতৃত্বে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের একটি সভা হওয়ার কথা ছিল। একই স্থানে সভা ও মিছিলের চেষ্টা করে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের অনুসারীরা

দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে বেশ কিছু যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ঢিল ছাড়াছুড়ির মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত আজিমপুর এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকে।ঘটনার সূত্রপাত হয় আজিমপুর রোডের পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের অনুষ্ঠানস্থলের সামনে ময়লা ফেলাকে কেন্দ্র করে।বৃহস্পতিবার সকালে সেই কমিউনিটি সেন্টারে কামরাঙ্গীর চর, লালবাগ ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন মুরাদ।অন্যদিকে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফিকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে তার অনুসারীরা একই সময়ে আজিমপুর রোডে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে এলাকাবাসী ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে জমে আছে ময়লার পাহাড়। মুরাদের সমর্থকরা সকালে সেখানে এসে ময়লার স্তূপ দেখে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন।খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়, পুরো এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। কিন্তু বেলা১১টার দিকে মেয়রপন্থি আওয়ামী লীগ কর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আজিমপুর রোডে ঢুকতে চাইলে শুরু হয় গন্ডগোল।ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান বলেন, ওই রোডে তাদের বিক্ষোভ সমাবেশের কোনো অনুমতি ছিল না। পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পলাশীর মোড়ে দুই পক্ষের কয়েকটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে বেলা ১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি ছিল থমথমে। এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে শুরু হয় ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ।এ সময় আজিমপুর এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আজিমপুর চৌরাস্তা, পলাশী, ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ এতিমখানা রোডের পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।আজিমপুর চৌরাস্তায় পুলিশ অবস্থান করলেও ভেতরের রাস্তাগুলো দিয়ে পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে জানান একাধিক প্রত্যক্ষ্যদর্শী।ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মেয়র সাঈদ খোকন এবং শাহে আলম মুরাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছে।গত ২৬ অক্টোবর মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে ওঠা নিয়ে দুই পক্ষের কর্মী সমর্থকরা হাতাহাতিতে জড়ালে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্য রূপ পায়।এর জের ধরে ১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বর্ধিত সভায় মুরাদের সমর্থকদের সঙ্গে মান্নাফির অনুসারীদের ফের হাতাহাতি হয়।

বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর শাহে আলম মুরাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের অনুষ্ঠান করছি। সেখানে কেনই বা ডাস্টবিনের ময়লা দিয়ে আটকে দেওয়া হল, তারপর আবার কেন পুলিশের সাথে মারামারি করেছে- এটা বুঝতে পারছি না।সাঈদ খোকনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ঢাকা ২৬ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিল হাসিবুর রহমান মানিককে ইঙ্গিত করে মুরাদ বলেন, ওখানকার এক কমিশনারসহ কিছু লোক পুলিশের সাথে মারামারি করেছে বলে আমি খবর পেয়েছি। এমনকি দীপুমনি আপার গাড়িতেও আঘাত করেছে। যারা আওয়ামী লীগ করে তারা কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না।এ বিষয়ে হাসিবুর রহমান মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কোনো লোকজন ওখানে মারামারি করতে যায়নি। আমাদের লোকজন আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে ছিল। দীপুমনি আপার গাড়িতে যারা ঢিল ছুড়েছে এবং ভাংচুর ও পোড়ানোর কাজ করেছে তারা উনাদের(মুরাদ) লোক। আমি ওয়ার্ড কমিশনার, আমার লোকজন কেন মারামারিতে যাবে?
এর আগে মুরাদের অনুষ্ঠানস্থলের সামনে ময়লা ফেলার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি বলেন, ময়লার মালিক তো আর আমি না। অনেক সময় গাড়ির সঙ্কট থাকেৃ অনেক জায়গায় ময়লা জমে থাকে। হয়ত সরিয়ে নিয়ে যাবে। আসলে তারা বিরোধিতা করার জন্য বিরোধিতা করে।এর আগে হাতাহাতির দুটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মান্নাফি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করেছে। উনারা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা, আমিও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা। এর প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচি দিতেই পারি।