একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার খান মো. নুরুল হুদা।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সোমবার সেনা মোতায়েন বিষয়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি মঙ্গলবার বলেন, বক্তব্যটি তার ব্যক্তিগত। এ ব্যাপারে কমিশন এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে সেনাবাহিনী নির্বাচনে থাকতে পারে কি না এ ব্যাপারে কথা বার্তা হচ্ছে।ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকী। কমিশন এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। সেনাবাহিনীকে আইন-শৃংখলাবাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভূক্ত করা প্রসঙ্গে সচিব বলেন, সেনাবাহিনীকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভূক্ত করতে হলে- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), সংবিধান ও সিআরপিসি সংশোধন করতে হবে। সেনাবাহিনী হচ্ছে দেশ রক্ষা বাহিনী, এরা আইন-শৃংখলা বাহিনী না।তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন হবে না অন্য কোন পদ্ধতিতে হবে।নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন বিষয়ে বিএনপি’র দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে দেশে যতগুলো সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, প্রত্যেকটিতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন হয়নি।ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আগামী নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে কি না এ বিষয়েও এখনো কমিশন কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। জাতীয় নির্বাচনে কি হবে এটা পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রোববারের একটি সমাবেশ থেকে ইভিএমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনীহা প্রকাশের পরদিন সোমবার একজন নির্বাচন কমিশনার একথা জানিয়ে আরো বলেছেন, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী থাকতে পারে। তবে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনে খালেদার দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি তিনি।নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সোমবার বিকালে নির্বাচন ভবনে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সবার অনুভূতি হচ্ছে যে, সেনা মোতায়েন হবে। তবে সেনাবাহিনীকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাব, কী প্রক্রিয়ায় তারা যুক্ত হবে সেটা বলার সময় হয়নি। কমিশন এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। কমিশন সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।সময়ই বলে দেবে সেনা মোতায়েন কীভাবে হবে। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমরা কখনোই বলব না যে, সেনা মোতায়েন হবে না।

ইভিএম বাদ দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ভাবা হচ্ছে জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, পুরাতন ইভিএম অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু ভালো আছে সেগুলো দিয়ে রংপুর কিংবা অন্য জায়গায় দেখার চেষ্টা করছি ইভিএম কার্যকর করা যায় কি না।তবে এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতেই হবে এমন চিন্তা কমিশনের নেই।ভবিষ্যতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ইভিএম যুক্ত করার পক্ষে অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যারা আসবে তাদের পথটা আমরা রুদ্ধ করতে চাই না। তাদের পথ প্রশস্ত করতে চাই। আমাদের ইভিএম ব্যবহারের প্রাথমিক প্রস্তুতি নেই। এখন পর্যন্ত যে দশা দেখছি এটা ব্যবহার সম্ভব নয়। আমাদের একটা স্বচ্ছ নির্বাচন করতে হবে। সেই স্বচ্ছ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ যন্ত্র দিয়ে হবে না।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এখন আগামী নির্বাচনে ‘সহায়ক সরকার’ চাইছে।রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নির্দলীয় সরকারের পাশাপাশি নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং ইভিএমে ভোটগ্রহণের উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানান।তবে তার ওই দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েন এবং ইভিএম ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান মাহবুব তালুকদার।