গাজীপুরের ‘নুহাশপল্লী’তে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ৬৯তম জন্মদিন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সোমবার পালিত পালিত হয়েছে। জন্মদিনে জনপ্রিয় এ লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে এদিন তাঁর কবরের পাশে মানুষের ঢল নেমেছে।
হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার রাতে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে হুমায়ুন আহমেদের হতে গড়া ‘নুহাশ পল্লী’তে প্রায় এক হাজার মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে পুরো নূহাশপল্লীকে আলোকিত করা হয়। এছাড়াও রাত বারটা এক মিনিটে কেক কাটা হয়।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশপল্লীতে আসেন। পরে তিনি শাওন ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কবর জিয়ারত ও মোনাজাতে অংশ নেন। কবর জিয়ারত শেষে নুহাশপল্লীতে হোয়াইট হাউসের পাশে স্থাপিত হুমায়ুন আহমেদের ম্যুরালের সামনে আপেল তলায় হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিনের কেক কাটেন তার দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত। এসময় শতাধিক ভক্ত, গণমাধ্যমকর্মী ও নুহাশপল্লীর কর্মচারীরাসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এসময় মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, হুমায়ূন আহমেদের ব্যবহৃত প্রচুর জিনিস আছে, সঙ্গে তার হাতে লেখা পান্ডুলিপি, বই, চশমা, কলমগুলো, ওনার গ্লাসগুলো, যে কাপে চা পান করতেন, যে টেবিলে লিখতেন, এগুলো সংরক্ষণের প্রয়োজন। সেগুলো আমার কাছে, হুমায়ূন আহমেদের ভাই-বোনদের কাছে, তার সন্তানদের কাছে আছে। আমার ইচ্ছা নুহাশ পল্লীতে একটি হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর করব। এই প্রস্তাবটা নিয়ে আমি পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করছি- খুব শীঘ্রই পারিবারিক সম্মতিতে আমরা নুহাশ পল্লীতে জাদুঘরটি স্থাপন শুরু করতে পারব।
শাওন আরো বলেন, আমরা যারা হুমায়ূন আহমেদকে সবসময় কাছে পেয়েছিলাম। একটা জায়গা আমরা আনন্দ পাই, যে আমাদের মনে হয়- ওই দিন আমাদের হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে সবার একটা আয়োজন। আমাদের ভেতরের আয়োজন কিন্তু রোজ থাকে। আমরা এক সাথে যে কোন সূটিং করলে আমরা হুমায়ূন আহমেদকে একইভাবে স্বরণ করি। যখন হুমায়ূন আহমেদের নাটক যখন এক সঙ্গে দেখি তখন স্বরণ করি। জন্মদিনে হয় কি- সারা বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে স্বরণ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিউজ তাকালে যেমন হুমায়ূন আহমেদের জন্য শুভেচ্ছায় সবাই ভরিয়ে দেয়, সবাই প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে। আমাদের তখন অনেক ভাল লাগে।
এসব অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নিশাত, নিনিত, অভিনেতা সৈয়দ হাসান সোহেল, নাটকের সহকারী পরিচালক জুয়েল রানা, মোঃ ইব্রাহিম, মোঃ তুহিনসহ নুহাশ পল্লীর কর্মচারিরাও অংশ নেন।
দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকেই হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা নুহাশপল্লীতে ভীড় জমাতে শুরু করেন। তারা তাদের প্রিয় লেখকের কবরে ফুল দেন এবং নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। ভক্তরা দিনভর তাদের প্রিয় লেখকের হাতে গড়া নুহাশপল্লী ঘুরে ঘুরে দেখেন। জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশপল্লীর ভাষ্কর আসাদ খান তার দ্বিতীয় একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী করেন। এতে কাঠ দিয়ে তার তৈরী ৬৯টি শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়।
এদিকে হুমায়ুন আহমেদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবহনের উদ্যোগে গাজীপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। সকালে ক্যান্সার সচেতনতামূলক ৩০ জনের একটি সাইকেল র্যালি জেলা শহর থেকে নুহাশ পল্লীতে যায়। পথিমধ্যে তারা সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করে। সংগঠনের ১৫ সদস্যের অপর একটি দল ঢাকা থেকে খালি পায়ে হেঁটে নূহাশপল্লীতে যায়। বিকেলে হিমু পরিবহন গাজীপুরের উদ্যোগে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘হুমায়ূন জন্মোৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব আলম। অধ্যাপক মুকুল কুমার মল্লিক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াৎ হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক অসীম বিভাকর, প্রকৌশলী মজিবুর রহমান কাজল, সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক নাসরীন সুলতানা বেবীসহ সংগঠনের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গতঃ ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন হুমায়ুন আহমেদ। তার ডাক নাম ছিল কাজল। বাবার রাখা তার প্রথম নাম শামসুর রহমান। পরে তিনিই তার ছেলের নাম বদলে রাখেন হুমায়ুন আহমেদ। তিনি দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯জুলাই ৬৪ বছর বয়সে আমেরিকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। পরে ২৪ জুলাই গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকায় নিজের গড়া নুহাশ পল্লীর লিচুগাছ তলায় প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদকে দাফন করা হয়।