আধুনিকতার যুগে হাড়িয়ে যাচ্ছে পাটি শিল্প। গ্রামের সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষেরা পাটি তৈরির কাজ করে থাকেন। চরাঞ্চলে গজিয়ে ওঠা মোতা (এক ধরনের গাছ) দিয়ে বিছানা, নামাজ পড়ার পাটি/সপ তৈরি করে ভালোই চলছিলো তাদের জীবন। দামে সস্তা হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা প্রচুরক ছিলো। বর্তমানে আধুনিক যুগে প্লাস্টিকের সুতো দিয়ে রংবেরং এর পাটি তৈরি হওয়ার এর চাহিদা দিনদিন কমে যাচ্ছে। কিন্তু পুরাতন পাটি শিল্পের কাজে নিয়োজিত বা এই শিল্পের কারিগররা অন্য কোন কাজ না জানায় তারা আজ মানবেতর জীবনযাপন করে। অধিকাংশই আজ বেকার। ফলে সংসার চালানো তাদের জন্য খুবই কঠিন। অনেক পরিবার আবার একবেলা খেতে পারলেও আর একবেলার খাবার তাদের ভাগ্যে জোটেনা।

চার সন্তানের জনক ফজল হক (৫২)। মৃত্যু জামাল উদ্দিন ছেলে তিনি। বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের উত্তর ধুবনী এলাকায়। ৬ সদস্যের সংসার। দুই ছেলে দুই মেয়ের মধে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে। ছোট মেয়ে পড়ে নবম শ্রেণিতে। বড় ছেলে বেকার (ভবঘুরে) আর ছোট ছেলেটি পড়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে। ৩ শতাংশ জমির উপর জীর্ণশীর্ণ বসতবাড়ি। গত বন্যায় সেই বাড়িরও ক্ষতি হয় অনেক। সংসার চলে পাটি বা সপ বানিয়ে। সরকারি বা বেসরকারি ভাতা, সাহায্য সহযোগীতা তারা কিছুই পান না। ইউপি মেম্বার চেয়ারম্যান কেউ তাদের খবর রাখেনা।

সরেজমিনে ঐ এলাকায় গিয়ে কথা হয় ফজল হকের সাথে। খুবই দুঃখের সহিত দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে তিনি প্রতিনিধিকে বলেন, বাবারে আমাগো খবর কেউ রাখেন না। আমরা গরীব বলে আমাগো খবর রাখার কেউ নেই। আগে এ কাজ করে ভালোই চলছিলো। এখন প্লাস্টিকে পাটি তৈরি হওয়ার এগুলোর তেমন কোন চাহিদা। নেই। অন্য কোন কাজ করতে পারিনা। আর এই কাজও ছাড়তে পারিনা। এর প্রতি আমার যে মায়া গেলে গেছে।

বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আগের মতো কাজ করতে পারিনা। ১টি পাটি তৈরি করতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। ফলে দিনে ৩-৪টি পাটির বেশি তৈরি করতে যায় না। প্রতিটি পাটি বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। অসুখবিসুখ হলে তো তা করতে পারিনা। ফলে আমাগো দুঃখ দুর্দশার শেষ নেই। মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে। তার বিয়ে দিমু ক্যামনে তাও জানিনা। ফজল হকের মতো এমনি অনেকই আমাদের গ্রামগঞ্জের চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নিজের আভিজাত্য আর ক্ষমতার মোহে কেউ তাদের খবর রাখেনা। তাদেরও খবর রাখা সমাজপতি, রাজনৈতিক নেতার ও জনপ্রতিনিধিদের উচিৎ বলে মনে করেন সুশীল সমাজের নেতারা।